স্টাফ রিপোর্টার।
২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে “বিডিআর হত্যাকাণ্ড: বাংলাদেশের নিরাপত্তার উপর প্রভাব” শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রফেসর কে. আলী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. লে. কর্নেল (অব.) শেখ আকরাম আলী।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা।
মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এইচআরএম রোকন উদ্দিন, পিএসসি, পিএইচডি বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরাপত্তা চরমভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে এবং এই ঘটনা শুধু আমাদের দেশেই নয়, সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তা কৌশলে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।”
বিশেষ অতিথি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালজার রহমান বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত একটি গণহত্যা, যা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ২০০১ সালে বিএসএফ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে ঘটিয়েছে।”
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, “ভারত কখনোই চায়নি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে শক্তিশালীভাবে টিকে থাকুক। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা আমাদের আন্তর্জাতিক ইমেজ নষ্ট করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আসছে।”
প্রধান অতিথি সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে বিভিন্ন সংকটে পড়েছে, বিশেষ করে রাজনীতি ও নিরাপত্তার দিক থেকে। আমাদের ভারতীয় ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সবসময় সজাগ থাকতে হবে।”
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম, গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) আখতার হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) আয়ুব হোসেন, মেজর ইমরান হাসান, লে. কর্নেল (অব.) নূরউদ্দিন, ড. নূরুল বশীর, আলহাজ মোহাম্মদ ফজরুল হক, ড. খন্দকার আলমগীর এবং লে. কর্নেল আজিজ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম তার বক্তব্যে বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত হামলা। যারা এই ঘটনার নীলনকশা তৈরি করেছে, তারা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে চেয়েছে। আজ আমরা যদি এ বিষয়ে সতর্ক না হই, তবে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ চক্রান্তের শিকার হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করে দেওয়ার জন্য একাধিক ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে চালানো হচ্ছে। আমাদের বাহিনীকে অভ্যন্তরীণ সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, যাতে শত্রুপক্ষ সহজেই আমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে।”
তিনি সরাসরি ভারতকে দোষারোপ করে বলেন, “ভারত আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ভিত দুর্বল করতে চায়। ২০০৯ সালের এই ঘটনা ছিল তাদের সুপরিকল্পিত একটি পদক্ষেপ। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলের সংশ্লিষ্টতাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
বাংলাদেশের নিরাপত্তা কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমাদের এখনই প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কৌশল ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া সম্ভব হয়।”
তিনি উপস্থিত সকল দেশপ্রেমিক নাগরিক ও গবেষকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও, জাতীয় স্বার্থে সবাইকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে।”
সেমিনারের সভাপতি অধ্যাপক ড. লে. কর্নেল (অব.) শেখ আকরাম আলী বলেন , “জাতীয় ঐক্যই আমাদের সকল সংকট ও ভারতের নিরাপত্তা হুমকি থেকে রক্ষা করতে পারে। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করতে হলে রাজনৈতিক ও কৌশলগত সচেতনতা বাড়াতে হবে।”