ওয়েস এন্ডারসন: পোশাকের ভাষায় গল্প বলা এক সুদক্ষ শিল্পী
ওয়েস এন্ডারসন, যিনি তাঁর সিনেম্যাটিক শৈলীর জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত, তাঁর সিনেমাগুলোতে পোশাকের ব্যবহারেও গভীর মনোযোগ দেন। তাঁর সিনেমায় চরিত্রদের পোশাক, গল্প বলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দ্য ফিনিশিয়ান স্কিম’-এও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ছবিতে পোশাকের মাধ্যমে চরিত্রদের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি গল্পের গতিকেও নিয়ন্ত্রণ করেছেন এই খ্যাতিমান পরিচালক।
এন্ডারসন ছোটবেলা থেকেই পোশাকের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। সিনেমার চরিত্রদের পোশাকের অনুকরণ করতে গিয়েই তাঁর মনে পোশাকের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। তাঁর মতে, পোশাক একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
এমনকি, পোশাকের মাধ্যমে সমাজের ক্ষমতা কাঠামোও প্রকাশ করা যায়।
‘দ্য ফিনিশিয়ান স্কিম’-এর গল্প আবর্তিত হয়েছে ১৯৫০ দশকের এক ব্যবসায়ীর জীবনকে কেন্দ্র করে। ছবিতে বেনিসিও দেল তোরো অভিনয় করেছেন প্রধান চরিত্রে, যিনি একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।
ছবিতে তাঁর পোশাক পরিকল্পনার জন্য এন্ডারসন ইতালীয় পোশাক ডিজাইনার মিলেনা ক্যাননেরোর সঙ্গে কাজ করেছেন। ক্যাননেরো এর আগে এন্ডারসনের ‘দ্য লাইফ অ্যাকুয়াটিক উইথ স্টিভ জিসু’, ‘দ্য গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল’-এর মতো ছবিতেও পোশাকের ডিজাইন করেছেন।
ছবিতে দেখা যায়, ধনী ব্যবসায়ীরা প্রায় সবাই ক্লাসিক ধাঁচের পিনস্ট্রাইপ স্যুট পরেন, যা তাদের ক্ষমতা এবং প্রভাবের প্রতীক। ক্যাননেরোর কাজ ছিল, কিভাবে এই আমেরিকান স্যুটগুলোকে ইউরোপীয়দের থেকে আলাদা করা যায় এবং প্রত্যেকটি চরিত্রের জন্য নিজস্বতা আনা যায়, তা নিশ্চিত করা।
এন্ডারসন তাঁর সিনেমায় পোশাকের ব্যবহারকে গল্পের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখেন। তাঁর মতে, পোশাক শুধুমাত্র দৃশ্যমান সৌন্দর্য্য নয়, বরং তা একটি শক্তিশালী ভাষা, যা চরিত্রের ভেতরের গল্পকে দর্শকের কাছে পৌঁছে দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, ‘দ্য রয়্যাল টেনেনবামস’-এ রিচি টেনেনবামের মাথার ব্যান্ডটি তাঁর মানসিক অস্থিরতা এবং ভালোবাসার ইঙ্গিত দেয়। একইভাবে, ‘দ্য গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল’-এর কর্মীদের পোশাক অথবা ‘ফ্যান্টাস্টিক মিস্টার ফক্স’-এর গল্পের মাধ্যমে পোশাকের মাধ্যমে গল্পের গভীরতা ফুটিয়ে তোলেন তিনি।
ওয়েস এন্ডারসনের সিনেমাগুলোতে পোশাকের এই সূক্ষ্ম ব্যবহার, একজন পরিচালকের গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং শিল্পবোধের প্রমাণ। তাঁর ছবিতে পোশাক, গল্প বলার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করে এবং সিনেমার বিষয়বস্তুকে আরও গভীর করে তোলে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন