বিশ্বখ্যাত মডেল নাওমি ক্যাম্পবেলের ফ্যাশন দুনিয়ায় পথচলার এক অবিস্মরণীয় ঘটনা আজও মানুষের মনে গেঁথে আছে। ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসে প্যারিসে ভিভিয়েন ওয়েস্টউডের ‘অ্যাঙ্গলমেনিয়া’ ফ্যাশন শো-তে উঁচু প্ল্যাটফর্মের জুতো পরে র্যাম্পে হাঁটার সময় তিনি হোঁচট খেয়ে পরে যান।
সেই মুহূর্তটি ফ্যাশন ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। নাওমি ক্যাম্পবেলের সেই পতনের ঘটনাটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা ছিল না, বরং তা ফ্যাশন জগতের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
২১ সেন্টিমিটার (৮.২ ইঞ্চি) উঁচু হিলের সেই জুতো পরে হাঁটার সময় ভারসাম্য রাখতে না পারায় তিনি পড়ে যান। শুরুতে অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, ক্যারিয়ারের জন্য এটি একটি খারাপ ঘটনা হবে।
কিন্তু বাস্তবে, এই ঘটনা নাওমির খ্যাতি আরও বাড়িয়ে দেয়। এই ঘটনার পর অন্যান্য ডিজাইনাররা নাকি তাকে তাদের শো-গুলোতে অংশগ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলেন।
তাদের ধারণা ছিল, এই পতনের মধ্যে এমন কিছু ছিল যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। ডেভিড লেটারম্যানের টক শো-তে একবার এই ঘটনা নিয়ে কথা বলার সময় নাওমি জানান, তিনি হাসতে শুরু করার পরেই উপস্থিত সকলে হাসতে শুরু করেছিলেন।
ঘটনাটির কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি যে সাদা রঙের মোজা পরেছিলেন, তা ছিল খুবই পিচ্ছিল। ভিভিয়েন ওয়েস্টউড নিজেও পরে এই ঘটনার জন্য মোজাকে দায়ী করেন।
তিনি বলেছিলেন, মোজা এবং জুতোর কারণে নাওমির পায়ের পাতা আটকে গিয়েছিল, যার ফলে তিনি পরে যান। পতনের পর, নাওমি আবার র্যাম্পে ফিরে আসেন এবং দ্বিতীয়বার হাঁটা শুরু করেন।
এবার তিনি আগের মোজাগুলো খুলে ফেলেন এবং একটি লাঠি হাতে নিয়ে হাঁটা শুরু করেন। যদিও তিনি লাঠিটি ব্যবহার করেননি, তবে তার এই দৃঢ়তা অনেকের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
এই ঘটনার পর, ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম (V&A) তাদের সংগ্রহে সেই জুতোটি যুক্ত করে। মিউজিয়ামের একজন কিউরেটর জানান, এই ঘটনাটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তারা সাথে সাথেই জুতোটি সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
এমনকি, ব্রিটেনের প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথও নাকি জুতোজোড়া দেখে মন্তব্য করেছিলেন, নাওমির এতে পরে যাওয়াটা আশ্চর্যের কিছু নয়।
এই ঘটনার রেশ ধরে, ক্যাম্পবেলের পরা উজ্জ্বল গোলাপি রঙের পালকের বোয়া এবং স্কটিশ ‘ওয়েস্টউড গর্ডন পিঙ্ক’ টারটান স্কার্টও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
নাওমি ক্যাম্পবেল এই ঘটনাটিকে সবসময় ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই পতন আমার জীবনের একটি অংশ। মানুষ ভুল করে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো উঠে দাঁড়ানো এবং আবার চেষ্টা করা।”
বর্তমানে, এই জুতো জোড়া V&A মিউজিয়ামের অন্যতম আকর্ষণ। এমনকি, এই ঘটনার স্মরণে তারা বিভিন্ন স্মারকও বিক্রি করে, যা আজও খুব জনপ্রিয়।
নাওমি ক্যাম্পবেলের এই ঘটনা প্রমাণ করে, একজন মানুষ কতটা দৃঢ়চেতা হলে প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারে। ফ্যাশন জগতে তার এই উদাহরণ, সকলের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন