শিরোনাম: ইংল্যান্ডের এক প্রাচীন ফুটবল উৎসব: যেখানে মারামারি চলে না, চলে উন্মাদনা!
ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের একটি ছোট শহর, অ্যাশবার্নে, প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় এক ব্যতিক্রমী ফুটবল উৎসব—রয়েল শ্রোভটাইড। খেলাটি এতটাই পুরনো যে এর নিয়মাবলীতে একটি বিশেষ ধারা আজও বিদ্যমান, যেখানে খেলোয়াড়দের একে অপরের ‘খুন’ করতে নিষেধ করা হয়েছে!
এই উৎসব যেন কয়েক শতাব্দীর পুরনো এক ঐতিহ্য, যা সাধারণ ফুটবল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে কয়েক’শ খেলোয়াড়দের দুটি দল (আপওয়ার্ডস ও ডাউনওয়ার্ডস) একটি বিশাল আকারের বল নিয়ে শহরের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খেলায় মেতে ওঠে। খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয় রাস্তাঘাট, নদী এবং ঝোপঝাড়—তবে চার্চ, গোরস্থান বা উপাসনালয়ের মতো পবিত্র স্থানগুলো এর আওতামুক্ত।
খেলা শুরুর আগে, বিশাল জনতা একটি স্থানে জড়ো হয়। এরপর একটি চামড়ার তৈরি বিশাল আকারের বল, যা দেখতে অনেকটা কুমড়োর মতো, সেটি ছুঁড়ে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় আসল খেলা। খেলোয়াড়রা বলটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের লক্ষ্য থাকে শহরের দুই প্রান্তে অবস্থিত মিলস্টোনের (millstone) কাছাকাছি বলটি নিয়ে যাওয়া, যেখানে বলটিকে তিনবার স্পর্শ করতে পারলে গোলের হিসেবে ধরা হয়।
এই খেলায় শারীরিক শক্তি, কৌশল এবং কিছুটা বুদ্ধিরও প্রয়োজন হয়। খেলোয়াড়দের মধ্যে কেউ কেউ রাগবি অথবা বক্সিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন, যা তাদের লড়াইয়ে সাহায্য করে। খেলার সময়, খেলোয়াড়রা দলবদ্ধভাবে বলের চারপাশে ভিড় করে এবং এক প্রকার ‘হুড়োহুড়ি’ শুরু করে। বলটিকে নিজেদের দিকে নেওয়ার জন্য চলে প্রাণপণ চেষ্টা।
খেলা চলাকালীন সময়ে, অনেক দর্শক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে খেলা উপভোগ করেন। কেউ কেউ উঁচু স্থানে উঠে খেলা দেখার চেষ্টা করেন। খেলাটি এতই উন্মাদনাময় যে অনেক সময় বল কোথায় আছে, তা খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে।
রয়েল শ্রোভটাইড উৎসব অ্যাশবার্নের মানুষের কাছে অত্যন্ত গর্বের একটি বিষয়। এমনকি, এই খেলার জন্য শহরের স্কুলগুলোর ছুটিও সমন্বয় করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও নাতালি ওয়েকফিল্ডের মতে, “এটি পাগলামি, তবে সেরা উপায়ে।
এই খেলার সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাজা বা রাজপরিবারের সম্মানও। ২০০৩ সালে তৎকালীন যুবরাজ চার্লস এই খেলার উদ্বোধন করেছিলেন এবং খেলাটি উপভোগও করেছিলেন। বিজয়ী খেলোয়াড়দের স্থানীয় বীরের মতো সম্মানিত করা হয় এবং তাদের কাঁধে তুলে পুরো শহর ঘোরানো হয়।
এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি প্রতি বছর ‘শোভ মঙ্গলবার’ ও ‘অ্যাশ বুধবার’-এ অনুষ্ঠিত হয়। এটি অ্যাশবার্নের মানুষের জন্য এক আনন্দ ও উৎসবের উপলক্ষ। খেলাটি শুধু একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, বরং এটি একটি সম্প্রদায়ের মিলনমেলা, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
তথ্যসূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস