**মায়েদের জয়যাত্রা: ববস্লেড ও স্কেলেটন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে মাতৃত্বের উদযাপন**
খেলাধুলা জগৎ সব সময়ই কঠিন, সেখানে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো সহজ নয়। আর এই কঠিন পথ আরও দুর্গম হয়ে ওঠে যখন একজন নারী একইসঙ্গে মা হন। সম্প্রতি, ববস্লেড ও স্কেলেটন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তেমনই এক অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মায়েরা তাঁদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সাহসিকতার প্রমাণ রেখেছেন।
ববস্লেড ও স্কেলেটন – এই দুইটি খেলা এখনো আমাদের দেশে খুব পরিচিত নয়। ববস্লেড অনেকটা বরফের ট্র্যাকের ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে দৌড়ানো একটি বিশেষ ধরনের গাড়ির মতো, যেখানে দলবদ্ধভাবে খেলোয়াড়রা অংশ নেন। আর স্কেলেটন হলো মাথার দিকটা সামনের দিকে রেখে বরফের ওপরের রাস্তায় স্লাইডিং করা।
এবার এই চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন চার জন মা। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেলি কার্টিস (স্কেলেটন), সুইজারল্যান্ডের নাদজা পাস্তেরনাক (ববস্লেড), এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই ববস্লেড খেলোয়াড় – এলানা মেয়ার্স টেইলর ও কাইলি হামফ্রিস। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া মায়েদের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা।
এই চার জন নারীর প্রত্যেকেই গর্ভাবস্থায় খেলার জগৎ থেকে কিছুদিনের জন্য দূরে ছিলেন। এলানা মেয়ার্স টেইলরের ক্ষেত্রে, তিনি এখন দুই সন্তানের মা, তাই তাঁকে দু’বার এই বিরতি নিতে হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ববস্লেড ও স্কেলেটন ফেডারেশন (IBSF) সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মায়েদের খেলাধুলায় ফেরার পথ সুগম করতে র্যাঙ্কিং ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে তাঁরা বিরতির পর আবার আগের মতোই নিজেদের জায়গা ফিরে পান।
কাইলি হামফ্রিস, যিনি ববস্লেডে তিনবার অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতেছেন, তাঁর কথায়, “আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে আমি ফিরে আসতে পারি। আমার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়েই আমি শুনেছি, মা হলে খেলোয়াড় জীবন শেষ হয়ে যায়। আমি সেটা প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে, ফল যাই হোক না কেন, আমি ফিরতে পারি।”
এই চ্যাম্পিয়নশিপে খেলোয়াড়দের পরিবারের সদস্যরাও তাঁদের উৎসাহ জুগিয়েছেন। বিশেষ করে, মেয়ার্স টেইলর তাঁর দুই সন্তানের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সতীর্থ এবং বন্ধুদের কাছ থেকে তিনি সবসময় সমর্থন পেয়েছেন।
অন্যদিকে, নাদজা পাস্তেরনাক, যিনি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সন্তানের জন্ম দেন, মাত্র ১২ সপ্তাহ পরেই আবার প্রতিযোগিতায় ফিরে এসেছেন। জার্মান ববস্লেডার লরা নোল্টে তাঁর প্রত্যাবর্তনে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, “যেন তিনি কখনো যানইনি।”
পুরুষ খেলোয়াড়রাও মায়েদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন। মার্কিন ববস্লেডার ফ্রাঙ্ক ডেল ডুকা বলেন, “শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েও একজন নারী যখন অন্য একটি প্রাণের জন্ম দেন, তারপর আবার ওজন তোলেন, দৌড়ান, এবং বিশ্ব মঞ্চে জেতেন, তখন খেলাধুলায় এর চেয়ে বেশি অনুপ্রেরণাদায়ক দৃশ্য আর কিছু হতে পারে না।”
এই মায়েদের জয়যাত্রা শুধু খেলাধুলাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সমাজের চোখে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। তাঁদের এই সাফল্যের গল্প, নারীশক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস