প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ: রিফিলযোগ্য সৌন্দর্য পণ্যের ভবিষ্যৎ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত অনেক পণ্যের মধ্যে অন্যতম হলো সৌন্দর্য্য বিষয়ক পণ্য। শ্যাম্পু থেকে শুরু করে মাস্কারা, এইসব পণ্যের মোড়কে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। একবার ব্যবহার করা এইসব প্লাস্টিক বর্জ্য হয় ডাস্টবিনে জমা হয়, নয়তো পরিবেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পরে। প্লাস্টিকের এই ক্রমবর্ধমান দূষণ কমাতে এখন বিশ্বজুড়ে রিফিলযোগ্য সৌন্দর্য পণ্যের ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে।
বর্তমানে, সৌন্দর্য্য শিল্পের উপর তাদের পরিবেশগত প্রভাব এবং প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য ক্রমবর্ধমান চাপ বাড়ছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ব্রিটিশ বিউটি কাউন্সিলের মতে, প্রায় ৯৫% প্রসাধনী মোড়ক ফেলে দেওয়া হয় এবং আমরা যে ১৪% সৌন্দর্য পণ্য পুনর্ব্যবহার করি, তার মধ্যে মাত্র ৯% প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভব হয়। বাকি অংশ ল্যান্ডফিলে জমা হয়, যা ভাঙতে প্রায় 450 বছর পর্যন্ত সময় লাগে। শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়, রিফিলযোগ্য পণ্য ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থও সাশ্রয় করতে পারেন।
সৌন্দর্য্য বিষয়ক সব পণ্য রিফিল করার সুযোগ না থাকলেও, বর্তমানে অনেক ব্র্যান্ড এই দিকে ঝুঁকছে। বাজারে এখন বেশ কিছু রিফিলযোগ্য পণ্য পাওয়া যায়, যা একই সাথে পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী। আসুন, এমন কিছু পণ্যের সাথে পরিচিত হওয়া যাক যেগুলো রিফিল করার সুযোগ রয়েছে।
চুলের যত্নে:
যদি আপনার চুল আমার মত হালকা পাতলা হয়, তবে এই সালফেট-মুক্ত ভলিউমাইজিং শ্যাম্পু হাতের কাছে রাখতে পারেন। এটি চুলের গোড়া মজবুত করতে অ্যামারান্থ থেকে প্রাপ্ত পেপটাইড এবং পরিবেশের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এই শ্যাম্পুর ১ লিটারের রিফিল প্যাক ব্যবহার করে আপনি আপনার ছোট বোতলটি বারবার পূরণ করতে পারেন। এছাড়াও, ড্রাই শ্যাম্পু ব্রাশও এখন বেশ জনপ্রিয়।
ত্বকের যত্নে:
ত্বকের যত্নে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তৈরি এই ফেনা যুক্ত ক্লিনিং জেল ত্বককে শুষ্ক না করে পরিষ্কার করে। এই রিফিল ব্যবহার করে আপনি বেশ কিছু টাকা বাঁচাতে পারেন এবং মূল প্যাকেজের তুলনায় ৭৫% কম প্লাস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও, হালকা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে “ওয়াটার ক্রিম” ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ক্রিমটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর বিশাল ডোজ রয়েছে।
মেকআপ:
বর্তমান সময়ে রিফিলযোগ্য লিপস্টিক বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। এই ধরনের লিপস্টিক টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব। লিপস্টিকের রিফিলগুলি ১০০% অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়, যা সহজেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এছাড়াও, আই শ্যাডো প্যালেটগুলিও রিফিল করার সুযোগ থাকে।
ডিওডোরেন্ট:
বাজারে এখন রিফিলযোগ্য ডিওডোরেন্টও পাওয়া যাচ্ছে। এই ধরনের ডিওডোরেন্টের রিফিলগুলি কম্পোস্ট করার যোগ্য এবং এতে শিয়া বাটার ও প্রোবায়োটিক রয়েছে।
শরীরের যত্ন:
ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে বডি ওয়াশ হিসেবে বেছে নিতে পারেন “ল’অক্সিটেন আমন্ড শাওয়ার অয়েল”। এই তেল ত্বককে নরম করে এবং এটি রিফিল করারও সুযোগ রয়েছে।
সুগন্ধি:
সুগন্ধির ক্ষেত্রে শ্যানেল কোকো মাদেমোয়েল ইডিপি ইনটেন্স পার্স স্প্রে-এর রিফিল পাওয়া যায়।
রিফিলযোগ্য সৌন্দর্য পণ্য ব্যবহার করা একদিকে যেমন পরিবেশের জন্য ভালো, তেমনি এটি আপনার খরচও কমায়। তাই, আসুন আমরা সবাই প্লাস্টিক দূষণ কমাতে এবং পরিবেশের সুরক্ষায় সচেতন হই।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান