নতুন দিগন্তের সূচনা: ডিসকভারি ক্রুজে রূপকথা, সিঙ্গাপুর থেকে যাত্রা শুরু
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ক্রুজ কোম্পানি ডিজনি তাদের বহরে যুক্ত করতে যাচ্ছে নতুন এক জাহাজ, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে সিঙ্গাপুর থেকে যাত্রা শুরু করবে। ‘ডিজনি অ্যাডভেঞ্চার’ নামের এই জাহাজটি শুধু আকারে বিশালই নয়, এতে রয়েছে নানা আকর্ষণ, যা একইসঙ্গে ভ্রমণকারীদের আনন্দ দেবে এবং তাদের কল্পনাবিলাসে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
এই জাহাজের গ্রস টনেজ ২ লক্ষ ৮ হাজার, যা প্রায় ৬ হাজার যাত্রী ধারণ করতে সক্ষম। ১,১২২ ফুট লম্বা এই জাহাজে সাতটি ভিন্ন থিমের ‘ল্যান্ড’ তৈরি করা হয়েছে। ডিজনি কর্তৃপক্ষের মতে, এই ক্রুজ সমুদ্রের মাঝে একটি গন্তব্যস্থল হিসেবে কাজ করবে।
‘ডিজনি অ্যাডভেঞ্চার’-এর আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মার্ভেল ল্যান্ড। এখানে অ্যাভেঞ্জার্স থিমের আকর্ষণীয় সব ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮২০ ফুট দীর্ঘ একটি রোলার কোস্টার, যেখানে যাত্রীরা ‘আয়রনসাইকেল’-এরPrototype -এর অভিজ্ঞতা নিতে পারবে। এছাড়াও, টয় স্টোরি প্লেস-এ জলকেলি করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা এবং সান ফ্রান্সোকিও স্ট্রিটে রয়েছে ‘বিগ হিরো আর্কেড’ ও ‘হিরো ট্রেনিং জোন’।
শুধু বিনোদনই নয়, এই জাহাজে রয়েছে ভোজনরসিকদের জন্য আকর্ষণীয় সব ব্যবস্থা। বিভিন্ন ধরনের রেস্তোরাঁ, যেখানে থাকবে বিভিন্ন স্বাদের খাবারের সম্ভার। এখানে রয়েছে দুটি এন্টারটেইনমেন্ট রেস্তোরাঁ, দুটি অ্যানিমেটেড রেস্তোরাঁ এবং দুটি গুরমেট রেস্তোরাঁ।
‘ডিজনি অ্যাডভেঞ্চার’-এ শিশুদের জন্যও রয়েছে বিশেষ আয়োজন। এখানে ‘বিববডি বববিডি বুটিক’-এ ৩ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা তাদের পছন্দের ডিজনি রাজকুমারীর সাজে সজ্জিত হওয়ার সুযোগ পাবে। এছাড়াও, মার্ভেল স্টাইল স্টুডিওতে আয়রন ম্যান, স্পাইডার-ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, ক্যাপ্টেন মার্ভেল এবং থরের মতো বিখ্যাত চরিত্রদের মতো হেয়ারস্টাইল, মেকআপ ও পোশাকের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্করাও এখানে মার্ভেল স্টাইলিং প্যাকেজ উপভোগ করতে পারবেন।
এই জাহাজে থাকছে বিলাসবহুল সব কেবিন ও স্যুট। এর মধ্যে দুটি ‘ফ্রোজেন’ থিমের কনসিয়ার্জ রয়্যাল স্যুট বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি স্যুট-এ একটি লিভিং রুম, বার-সহ ডাইনিং এলাকা, বিশাল মাস্টার বেডরুম, বাচ্চাদের জন্য আলাদা ঘর, দুটি বাথরুম এবং একটি ব্যক্তিগত হট টাব-সহ বড় বারান্দা রয়েছে।
মূলত, এই জাহাজটি অন্য একটি ক্রুজ লাইনের জন্য তৈরি করা হচ্ছিল। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই সেই কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় ডিজনি এটি কিনে নেয় এবং তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।
সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে ডিজনির চুক্তি অনুযায়ী, এই জাহাজটি কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে ক্রুজ সেন্টার থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বর্তমানে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভ্রমণের জন্য টিকিট বুক করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এই ক্রুজ একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বিশেষ করে যারা পরিবার নিয়ে একটি অসাধারণ এবং একইসঙ্গে আরামদায়ক ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এটি দারুণ একটি সুযোগ। যদিও টিকিটের মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে, তবে যারা আন্তর্জাতিক ভ্রমণে আগ্রহী, তাদের জন্য এই ক্রুজ নতুন অভিজ্ঞতা দিতে পারে।
বর্তমানে, সিঙ্গাপুর ভ্রমণে যেতে ভিসার প্রয়োজন হয়। তাই ভ্রমণের আগে ভিসার নিয়মাবলী সম্পর্কে জেনে নেওয়া ভালো। এছাড়াও, ভ্রমণের সময় সিঙ্গাপুরের আবহাওয়া ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কেও ধারণা রাখা দরকার।
ডিজনির এই নতুন ক্রুজ শুধু একটি জাহাজ নয়, এটি একটি স্বপ্নের জগৎ, যা ভ্রমণকারীদের জন্য অপেক্ষা করছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন