নতুন দিগন্তের সূচনা: শব্দের থেকেও দ্রুতগামী বিমানের স্বপ্ন
শব্দের গতিকে অতিক্রম করে বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করার এক অভাবনীয় ছবি প্রকাশ করেছে নাসা (NASA)। গত ১০ই ফেব্রুয়ারি, বোম সুপersonic (Boom Supersonic) কোম্পানির তৈরি করা এক্সবি-১ (XB-1) নামের একটি বিমানের দ্বিতীয় পরীক্ষামূলক উড়ানে শব্দের বাধা ভাঙার মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করা হয়। বিমানের চারপাশে তৈরি হওয়া শক ওয়েভ বা அதிঘাতী তরঙ্গগুলো “শ্লিরেন ফটোগ্রাফি” (Schlieren photography) প্রযুক্তির মাধ্যমে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।
বোম সুপersonic-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) ব্লেক স্কোল এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ছবি অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করে তুলেছে।” ক্যালিফোর্নিয়ার মোহাভে মরুভূমিতে (Mojave Desert) একটি নির্দিষ্ট সময়ে, সূর্যের আলোতে বিমানের ওড়ার সময় নাসা’র কর্মীরা বিশেষ ক্যামেরা ও ফিল্টার ব্যবহার করে ছবিগুলো তোলেন। শব্দের গতির চেয়েও বেশি গতিতে (যা ঘণ্টায় ১,২২৫.১ কিলোমিটার) বিমানটি আকাশে ওড়ে।
শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী বিমান বা সুপারসনিক বিমানের ধারণা নতুন নয়। ইতিমধ্যে এমন বিমানের বাণিজ্যিক ব্যবহারের প্রস্তুতি চলছে। বোম সুপersonic-এর লক্ষ্য হলো তাদের তৈরি ‘ওভারচার’ (Overture) নামের বিমান ২০৩০ সালের মধ্যে চালু করা। এই বিমানে একসঙ্গে ৬৪ থেকে ৮০ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন এবং এটি শব্দের চেয়ে ১.৭ গুণ বেশি গতিতে উড়তে সক্ষম হবে। এর ফলে বর্তমানের সাবসনিক বিমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে ভ্রমণ করা যাবে।
সুপারসনিক বিমানের ধারণা নতুন হলেও, এর আগে ‘কনকর্ড’ (Concorde) নামের একটি সুপারসনিক বিমান ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিল। ১৯৭০ সালে প্রথমবার শব্দের চেয়ে দ্রুতগামী হয়ে আকাশে ওড়ে কনকর্ড। কিন্তু ২০০৩ সালে বাণিজ্যিক উড়ান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এর ব্যবহারও সীমিত হয়ে যায়। শব্দ-তরঙ্গ বা সোনিক বুমের (Sonic boom) কারণে জনবহুল এলাকার উপর দিয়ে এই বিমান ওড়াতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। বোম সুপersonic চেষ্টা করছে যাতে তাদের বিমানে এই শব্দের সৃষ্টি না হয়। ব্লেক স্কোল বলেন, “শব্দহীন সোনিক বুম তৈরি করতে পারাটা দ্রুত সময়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণের সুযোগ তৈরি করবে।” তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই বিমানগুলো ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের এক উপকূল থেকে অন্য উপকূল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করতে পারবে, যা বর্তমানের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ দ্রুত হবে।
বোম সুপersonic-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মতে, ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে সুপারসনিক বিমানের নির্মাণ সহজ হয়েছে। নতুন এই বিমানে কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি উন্নত উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিমানটিকে হালকা ও শক্তিশালী করবে। এছাড়া, ওভারচার বিমান তৈরি করা হচ্ছে পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে, যা ১০০ শতাংশ টেকসই উড়োজাহাজ জ্বালানি (Sustainable Aviation Fuel – SAF) ব্যবহার করতে পারবে। কোম্পানিটি তাদের বিমানের ডিজাইন তৈরিতেও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যেমন – কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিক্স (Computational fluid dynamics), যা ডিজিটাল উইন্ড টানেলের মতো কাজ করে।
বোম সুপersonic-এর স্বপ্ন হলো, একদিন মানুষ খুব কম সময়ে এবং কম খরচে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে ভ্রমণ করতে পারবে। তাদের লক্ষ্য, বিমানের টিকিটের দাম এমন পর্যায়ে নিয়ে আসা, যাতে সাধারণ মানুষও দ্রুতগতির বিমানের সুবিধা নিতে পারে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম