প্রেমের সম্পর্কে যৌন আকাঙ্ক্ষা: মিল না হলে কী করবেন?
দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার গভীরতা বাড়াতে শারীরিক সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে অনেক সময় দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষায় ভিন্নতা রয়েছে। কারো হয়তো সঙ্গমের তীব্র আগ্রহ, আবার কারো ক্ষেত্রে আগ্রহের ঘাটতি দেখা যায়। এই বিষয়টিকে অনেক সময় ‘যৌন আকাঙ্ক্ষার অমিল’ বা ‘Libido-র পার্থক্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জর্জিয়া গ্রেস তাঁর ‘দ্য মডার্ন গাইড টু সেক্স’ বইয়ে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সমস্যাগুলো বেশ স্বাভাবিক এবং এর সমাধানে ধৈর্য ও আলোচনার মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভব। অনেক দম্পতি মনে করেন, তাঁদের মধ্যে যৌন সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা একই রকম না হওয়ার কারণ তাঁরা হয়তো ‘ভুল’ করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রতিটি মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা, ভালো লাগা, এবং শারীরিক অনুভূতির ধরন আলাদা। তাই, সঙ্গীর থেকে নিজের রুচি আলাদা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।
যৌন আকাঙ্ক্ষা আসলে কী? যৌন আকাঙ্ক্ষা হলো শারীরিক সম্পর্কের জন্য তীব্র আগ্রহ, যা একজন মানুষকে সেই দিকে আকৃষ্ট করে। এটা ক্ষুধা বা তৃষ্ণার মত একটি অনুভূতি, তবে পর্যাপ্ত যৌন সম্পর্ক না হলে মানুষের জীবনহানি ঘটে না। জর্জিয়া গ্রেস তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, যৌন সম্পর্কের পরিমাণ ‘সঠিক’ বা ‘স্বাস্থ্যকর’—এমন কোনো ধারণা নেই। তাই, সঙ্গীর সঙ্গে যৌন আকাঙ্ক্ষার পরিমাণে ভিন্নতা দেখা দিলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
বিশেষজ্ঞরা যৌন আকাঙ্ক্ষার ধরনকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন: স্বতঃস্ফূর্ত এবং প্রতিক্রিয়াশীল। স্বতঃস্ফূর্ত আকাঙ্ক্ষা হলো, যখন কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই হুট করে শারীরিক সম্পর্কের ইচ্ছা জাগে। সাধারণত সম্পর্কের শুরুতে অথবা সিনেমার দৃশ্যে আমরা এই ধরনের আকাঙ্ক্ষা দেখতে পাই। অন্যদিকে, প্রতিক্রিয়াশীল আকাঙ্ক্ষা হলো, কিছু উদ্দীপনার কারণে শারীরিক সম্পর্কের আগ্রহ তৈরি হওয়া। যেমন, আলিঙ্গন, ভালোবাসার কথা বলা, একসঙ্গে সময় কাটানো, অথবা কোনো উত্তেজক দৃশ্য দেখার মাধ্যমে এই ধরনের আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে।
আরেকটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, কম যৌন আকাঙ্ক্ষা শুধুমাত্র পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। বাস্তবে, নারী এবং পুরুষ উভয়ের মধ্যেই এই সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, একজন নারী হয়তো সঙ্গীর থেকে বেশি শারীরিক সম্পর্ক কামনা করেন, কিন্তু সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কারণে তিনি নিজেকে দোষী মনে করেন। আবার, পুরুষ সঙ্গীর মধ্যে চাহিদার ঘাটতি দেখা দিলে তিনি নিজেকে অক্ষম ভাবতে শুরু করেন। মনে রাখতে হবে, যৌন আকাঙ্ক্ষা একটি জটিল বিষয়, যা মানুষের ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল।
যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। মানসিক চাপ, ক্লান্তি, সংসারের অতিরিক্ত কাজের চাপ, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অথবা সম্পর্কের মধ্যে কলহ—এগুলো যৌন আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে দিতে পারে। যখন একজন নারী দিনের পর দিন সংসারের যাবতীয় কাজ একা হাতে সামলান, তখন রাতে স্বামীর শারীরিক সান্নিধ্য তাঁর কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে। কারণ, সারাদিনের কাজের পর তাঁর শরীর ও মন—দুটোই ক্লান্ত থাকে।
তাহলে, এই সমস্যার সমাধান কী? এক্ষেত্রে, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত।
জর্জিয়া গ্রেস তাঁর বইয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, যৌন সম্পর্ককে কেবল শারীরিক মিলন হিসেবে না দেখে, একে আনন্দ ও ভালোবাসার একটি মাধ্যম হিসেবে উপভোগ করতে হবে। সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে চুম্বন, আলিঙ্গন, একসঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো, এবং ভালোবাসার কথা বলা—এগুলো খুবই জরুরি। তিনি আরও বলেন, সঙ্গীকে খুশি করতে পারার অনুভূতি অনেক সময় শারীরিক সম্পর্কের থেকেও বেশি আনন্দ দেয়।
যৌন আকাঙ্ক্ষার অমিল দাম্পত্য জীবনে এক ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে। তবে, আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, ভালোবাসার সম্পর্কের ভিত্তি হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং শ্রদ্ধাবোধ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান