বিখ্যাত ব্যান্ড ‘পেট শপ বয়েজ’-এর প্রধান শিল্পী নীল টেনান্ট, যিনি দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আগ্রহী। সম্প্রতি তিনি বর্তমান রাশিয়ার অবস্থা এবং দেশটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন।
রাশিয়ার প্রতি টেনান্টের আগ্রহের কারণ
ছোটবেলায় ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব নিয়ে একটি বই পড়ে টেনান্টের মনে রাশিয়ার প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল। তিনি বলেন, জার সাম্রাজ্যের পতনের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হয়, যা অনেক পরিবর্তনের সূচনা করে। তবে দ্রুতই এটি স্তালিনের অধীনে একটি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এরপর সোভিয়েত সংস্কৃতি, বিশেষ করে শোস্তাকোভিচ ও প্রোকোফিয়েভের মতো শিল্পী, লেখক ও সঙ্গীতজ্ঞদের কাজ ও সংগ্রাম তাকে আকৃষ্ট করে।
সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রবেশের অভিজ্ঞতা
১৯৮৮ সালে সোভিয়েত ও ব্রিটিশ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়। সে সময় সোভিয়েত শিশুরা জানতে চায়, লন্ডনে তারা কাদের সঙ্গে দেখা করতে চায়। উত্তরে তারা জানায়, ‘পেট শপ বয়েজ’-এর সঙ্গে। টেনান্ট জানান, এর মাধ্যমেই তাদের সোভিয়েত শ্রোতাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর ১৯৯৩ সালে এমটিভি রাশিয়া চালু করার জন্য তারা প্রথমবার রাশিয়া যান। সে সময় তারা লাল স্কয়ারে ‘গো ওয়েস্ট’ গানের কিছু অংশের ভিডিও ধারণ করেন। টেনান্টের ভাষায়, সে সময় রাশিয়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ‘পশ্চিমের দিকে’ যাচ্ছিল, তাই লেনিনের মূর্তিগুলোর পশ্চিমি দিক নির্দেশ করাটা প্রাসঙ্গিক ছিল।
রাজনৈতিক পরিবর্তন ও বর্তমান পরিস্থিতি
টেনান্ট জানান, একসময় তিনি ভেবেছিলেন, ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষমতা গ্রহণ রাশিয়ার জন্য ইতিবাচক হবে। তিনি আশা করেছিলেন, পুতিন হয়তো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করবেন। কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন, তার সেই ধারণা ভুল ছিল। ২০০৫ সালে তারা লাইভ এইট কনসার্টে অংশ নেন, যা ছিল দারিদ্র্য বিমোচনের একটি আন্তর্জাতিক আয়োজন।
কিন্তু এরপর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। টেনান্ট বলেন, তিনি দেখেছেন, কীভাবে রাশিয়ার মিডিয়া ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের কথা। তিনি মনে করেন, রাশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। একইসঙ্গে তিনি অতীতের ভুলগুলো স্বীকার করে, ইউক্রেনের প্রতি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলেন।
ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
টেনান্ট আশা করেন, রাশিয়া একদিন শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ একটি দেশে পরিণত হবে, যা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করবে। তিনি চান, দেশটি প্রতিবেশী ও নিজ নাগরিকদের প্রতি নিপীড়কের ভূমিকা ত্যাগ করুক এবং বিশ্ব সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হোক।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান