শিরোনাম: বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কলম ধরে সাড়া ফেলে দিয়েছেন লেখিকা টরি পিটার্স
টরি পিটার্স, যিনি তাঁর ভিন্নধর্মী লেখার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছেন, সম্প্রতি তাঁর নতুন সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন। তাঁর লেখালেখির জগৎ সবসময়ই কল্পনাবাদী, যেখানে তিনি এমন সব বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন যা সমাজের চিরাচরিত ধারণা থেকে অনেক দূরে। তাঁর নতুন বই ‘স্ট্যাগ ড্যান্স’ সেই ধারাবাহিকতারই একটি অংশ, যা লিঙ্গান্তরকামী মানুষের জীবন এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
তাঁর আগের বই ‘ডিট্রান্সিশন, বেবি’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর, পিটার্স যেন আরও বেশি নিরীক্ষামূলক এবং সাহসী হয়ে উঠেছেন। ‘স্ট্যাগ ড্যান্স’-এ তিনি কেবল একটি গল্প বলেননি, বরং তিনটি ছোট গল্প এবং একটি উপন্যাস জুড়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে ‘ইনফেক্ট ইউর ফ্রেন্ডস অ্যান্ড লাভড ওয়ানস’, ‘দ্য মাস্কার’ এবং ‘দ্য চেসার’ উল্লেখযোগ্য। এই প্রতিটি গল্পেই তিনি মানুষের ভেতরের জটিলতা এবং সমাজের চোখে তাদের অবস্থান ফুটিয়ে তুলেছেন।
পিটার্সের লেখার একটি বিশেষত্ব হলো, তিনি প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে দেন। উদাহরণস্বরূপ, ‘স্ট্যাগ ড্যান্স’-এর গল্পগুলোতে লিঙ্গ পরিবর্তনের চিরাচরিত ধারণা ভেঙে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে মানুষ তাদের জীবনকে নতুনভাবে খুঁজে নিতে পারে, এমনকি সমাজের প্রচলিত নিয়ম ভেঙেও।
তবে, পিটার্সের এই সাহসী লেখনশৈলী সব সময় সবার কাছে গ্রহণীয় হয়নি। ‘দ্য মাস্কার’ নামক গল্পটি নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। গল্পটিতে রূপান্তরকামীদের যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং সমাজের কিছু নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়েছে। পিটার্স মনে করেন, এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা জরুরি, কারণ এগুলো আমাদের সমাজেরই অংশ।
নিজের লেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে পিটার্স বলেন, তাঁর প্রথম বইয়ের সাফল্যের পর তিনি এমন এক পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন, যেখানে সবাই তাঁর কাছে ‘ট্রান্স’ বিষয়ক গল্পের প্রত্যাশা করত। কিন্তু তিনি সেই গণ্ডির বাইরে এসে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে চেয়েছেন। তিনি চান, তাঁর লেখা যেন শুধু একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং সমাজের সকল স্তরের মানুষকে স্পর্শ করে।
তাঁর লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো, লিঙ্গপরিচয় নিয়ে প্রচলিত ধারণাগুলোকে প্রশ্ন করা। তিনি মনে করেন, এই পরিচয় মানুষের জীবনের একটি অংশ হতে পারে, তবে এটিই সবকিছু নয়। একজন মানুষ হিসেবে আমাদের আরও অনেক পরিচয় থাকতে পারে, যা আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে। পিটার্স বিশ্বাস করেন, মানুষ হিসেবে আমাদের সবার মধ্যেই গভীর কিছু প্রশ্ন রয়েছে, যা আমাদের প্রতিনিয়ত নতুন করে ভাবতে শেখায়।
টরি পিটার্সের এই নতুন কাজগুলো শুধু সাহিত্য হিসেবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি সমাজের চোখে লিঙ্গপরিচয় এবং মানুষের জীবন সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। তাঁর লেখনীর মাধ্যমে, আমরা আমাদের চারপাশের জগৎকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি এবং সমাজের নানা বিষয় নিয়ে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত হই।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান