নৃত্য জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র: শ্যানেল ডি’সিলভা
ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি ছিল শ্যানেল ডি’সিলভার তীব্র আকর্ষণ। তিনি যেন নাচের মধ্যে মুক্তি খুঁজে পেতেন, নিজেকে আবিষ্কার করতেন। আমেরিকার এই তরুণ নৃত্য পরিচালক বর্তমানে বিশ্বজুড়ে পরিচিত মুখ। সম্প্রতি তিনি লন্ডনে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন।
শ্যানেলের নাচের ধরনটি “কলা এবং মানবিকতার” এক অপূর্ব মিশ্রণ। তিনি ক্লাসিক্যাল ও আধুনিক নাচের কৌশলকে কাজে লাগান, সেই সঙ্গে তার মধ্যে থাকে নিজস্ব স্বাধীনতা ও স্বাভাবিকতা। তার কোরিওগ্রাফিতে গভীরতা থাকে, যা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়।
শ্যানেলের নতুন নৃত্যনাট্য ‘এ শ্যাডো ওয়ার্ক’-এ ফুটে উঠেছে মায়ের মৃত্যুতে তার গভীর শোকের চিত্র। যখন তার বয়স ছিল উনিশ বছর, সেই সময়ে মায়ের মৃত্যু তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। সেই শোককে তিনি প্রথমে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি উপলব্ধি করেন, এই শোককে প্রকাশ করা জরুরি। তাই তিনি নাচের মাধ্যমে সেই কষ্টকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
শ্যানেলের নাচের জীবন শুরু হয়েছিল ‘ফেম’ নামক একটি পারফর্মিং আর্ট স্কুলে। এরপর তিনি বিখ্যাত জুইলিয়ার্ড স্কুলে ভর্তি হন। তিনি বলেন, “জুilliard-এ আসার পর নাচের ধারণাটাই আমার সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল।”
নিজের জীবনের কঠিন অভিজ্ঞতাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছেন শ্যানেল। তিনি মনে করেন, শিল্পের মাধ্যমে সমাজের কথা বলা উচিত। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি ‘পাবলিক/প্রাইভেট’ নামে একটি নৃত্য পরিবেশনা তৈরি করেন। যেখানে নারীদের সম্মানহানির বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছিল।
শুধু নৃত্য পরিচালক হিসেবেই নয়, শ্যানেল একজন সমাজকর্মীও। তিনি তরুণ, প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেন এবং তাদের ভালো ভবিষ্যতের জন্য কাজ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সমাজের দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি শিল্পীর নৈতিক দায়িত্ব।
একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ব্যালে জগতে নিজের স্থান তৈরি করাটা সহজ ছিল না। তবে তিনি পিছিয়ে যাননি। তিনি সব সময় চেষ্টা করেছেন, সমাজের অন্য নারীদেরও এগিয়ে নিয়ে যেতে। শ্যানেল ডি’সিলভা মনে করেন, শিল্পীরাই পারে সমাজের পরিবর্তন ঘটাতে।
বর্তমানে তিনি তার নতুন কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার লক্ষ্য হলো শিল্পের জগৎকে আরও বেশি মানবিক এবং সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলা। তিনি বিশ্বাস করেন, শিল্পকলার মাধ্যমে সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে অনেক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান