ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের উপর কতটা প্রভাব?
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এর মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য আমেরিকার প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মনোযোগ বাড়ছে। তবে এক্ষেত্রে রাশিয়ার সম্মতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেদিকেই সবার দৃষ্টি। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এক্ষেত্রে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপর কী ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে, তা এখন অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত কয়েক বছরে প্রায়ই প্রশ্ন উঠেছে, পুতিনের উপর ট্রাম্পের কী প্রভাব থাকতে পারে। তবে এখন আলোচনা হচ্ছে, ট্রাম্প কীভাবে পুতিনকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারেন। বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্সো রুবিও জানান, তারা রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন এবং ইতিবাচক ফলাফলের আশা করছেন। অন্যদিকে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মিডিয়াকে সতর্ক করে বলেন, ‘খুব বেশি এগিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না’। তিনি ইঙ্গিত দেন, পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে কথা হতে পারে।
তবে রুবিওর আশাবাদ সত্ত্বেও, রাশিয়ার অবস্থান বেশ শক্ত দেখা যাচ্ছে। ক্রেমলিনের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে সুবিধা আদায় করতে চাইছে। তারা মনে করে, রাশিয়া বর্তমানে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, রাশিয়া অবশ্যই যুদ্ধবিরতি চায়, তবে এর বিনিময়ে কিছু নিশ্চয়তা প্রয়োজন, বিশেষ করে আমেরিকার কাছ থেকে।
বাস্তবতা হলো, রাশিয়া সামরিক ক্ষতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হওয়া সত্ত্বেও, তাদের মনে হচ্ছে তারা জিতছে। রাশিয়া মনে করে, যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনের জন্য উপকারী হবে। যদিও রুশ সামরিক বাহিনী ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে এবং এর জন্য অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে, রাশিয়া চায় আলোচনার মাধ্যমে তাদের এই অবস্থান প্রতিফলিত হোক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প সম্ভবত রাশিয়াকে রাজি করাতে ‘আকর্ষক’ প্রস্তাবের দিকে ঝুঁকবেন। এর মধ্যে ইউক্রেনের জন্য কঠিন কিছু বিষয়ও থাকতে পারে, যা দেশটির পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন হবে। রাশিয়ার উপর ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা কম, কারণ বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য এমনিতেই অনেক কমে গেছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প পুতিনকে কিছু সুবিধা দিতে পারেন। যেমন, রাশিয়ার উপর থেকে ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে এবং পশ্চিমা প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুতিনের দীর্ঘমেয়াদি কিছু দাবি রয়েছে, যা সহজে পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। এর মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের সামরিকীকরণ বন্ধ করা, ভবিষ্যতে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার নিশ্চয়তা এবং ক্রিমিয়া সহ রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলো ছেড়ে না দেওয়া। ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে এই বিষয়গুলো গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।
ট্রাম্পের ইউক্রেনের উপর একতরফা চাপ, যেমন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাম্প্রতিক বৈঠক, পুতিনকে সম্ভবত এই ধারণা দিয়েছে যে রাশিয়ার উপর ট্রাম্পের প্রভাব দুর্বল। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জন লফ গত বছর লিখেছিলেন, ‘ট্রাম্প সম্ভবত মনে করেন, পশ্চিমারা বিশ্ব মঞ্চে তাদের আধিপত্য হারিয়েছে, তাই পুতিন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে এখন তিনিই সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন’।
সব মিলিয়ে, এখন পর্যন্ত একটি বিষয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে – ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি করা। তবে, কিয়েভে সামরিক সহায়তা স্থগিত করার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে, ট্রাম্পের জন্য এটি সম্ভবত সবচেয়ে কম পছন্দের উপায়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান