অটিজম নিয়ে নির্মিত একটি ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র ‘দ্য স্টিমিং পুল’ বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই সিনেমায় অটিজম আক্রান্ত মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের ভাবনা এবং অনুভূতির গভীর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যা দর্শকদের এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা দিচ্ছে।
ব্রিটেনের প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ অটিজমের শিকার, কিন্তু তাদের জীবন ও জগৎ নিয়ে সিনেমা খুবই কম তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, অটিস্টিক মানুষের পরিচালনায় তৈরি হওয়া ‘দ্য স্টিমিং পুল’ সিনেমাটি এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন পাঁচজন তরুণ অটিস্টিক পরিচালক। তারা সবাই তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির আলোকে সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন। সিনেমাটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন কুইন মেরী ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভেন ইস্টউড। ওয়েলকাম ট্রাস্টের আর্থিক সহযোগিতায় মাত্র ১২ দিনে সিনেমাটির শুটিং সম্পন্ন হয়েছে। পরিচালকদের মতে, এই সিনেমার মূল উদ্দেশ্য হলো অটিজম নিয়ে অন্যদের ধারণা দেওয়া বা এর ব্যাখ্যা করার পরিবর্তে, অটিজম আক্রান্ত মানুষের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের জীবনকে তুলে ধরা।
সিনেমাটিতে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যেমন– ‘স্টিমিং’ বা স্ব-উদ্দীপক আচরণ। সিনেমায় এই বিষয়টি বিভিন্ন দৃশ্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে, যা দর্শকদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। একজন নারী, যিনি সব সময় বাইরের জগতের চাপ থেকে বাঁচতে শব্দ নিরোধক হেডফোন ব্যবহার করেন, সিনেমায় তার জীবনের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া, পরিত্যক্ত কারখানায় শ্বেত পোশাক পরা বিজ্ঞানীদের কিছু বিচিত্র পরীক্ষা এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত একটি অ্যানিমেটেড দৃশ্যও সিনেমার আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছে।
সিনেমাটি নিয়ে বিভিন্ন জনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কারো কারো মতে, সিনেমাটি তাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি, যা আগে কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি। তারা এই সিনেমায় অটিজম আক্রান্ত মানুষের ভালো এবং খারাপ উভয় দিকই খুঁজে পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ সিনেমাটিকে তাদের কাছে দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। তবে, সমালোচকদের ভিন্নমত সত্ত্বেও, ‘দ্য স্টিমিং পুল’ অটিজম নিয়ে নির্মিত সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পরিচালক ও নির্মাতারা মনে করেন, এই সিনেমাটি অটিজম আক্রান্ত মানুষের জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করবে। তারা চান, এই সিনেমা সমাজের প্রচলিত ধারণাগুলোকে ভেঙে দেবে এবং অটিজম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian