মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, আঠারো শতকের একটি পুরনো আইনের আশ্রয় নিয়ে পাঁচ জন ভেনেজুয়েলীয় নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং আইনি চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধের সময় প্রণীত ‘এলিযেন এনিমিজ অ্যাক্ট’ (Alien Enemies Act) নামক একটি আইনের উল্লেখ করে, এই বিতাড়নের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৭৯৮ সালের এই আইনটি মূলত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। শনিবারে হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ (Tren de Aragua) নামক একটি ভেনেজুয়েলীয় গ্যাং-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের সদস্যরা বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে।
তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটন ডিসির একটি ফেডারেল আদালত, বিতাড়ন প্রক্রিয়াটি ১৪ দিনের জন্য স্থগিত করে দেয়। আদালতের বিচারক জেমস বোয়াসবার্গ, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (American Civil Liberties Union – ACLU) এবং ডেমোক্রেসি ফরোয়ার্ড (Democracy Forward) নামক দুটি সংগঠনের করা মামলার প্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেন। সংগঠন দুটি ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে আইনের অপব্যবহার হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাদের যুক্তি, ‘এলিযেন এনিমিজ অ্যাক্ট’ একটি বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং এর আগে কেবল তিনটি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই আইনের প্রয়োগ হয়েছিল: ১৮১২ সালের যুদ্ধ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
আবেদনকারীদের মতে, ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যুদ্ধ নেই, দেশটি যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণও করেনি, তাই এই পরিস্থিতিতে এই আইনের প্রয়োগ করা যায় না। তাদের আশঙ্কা, এই আইনের মাধ্যমে সরকার কোনো রকম শুনানির সুযোগ না দিয়েই দ্রুত বিদেশি নাগরিকদের বিতাড়িত করতে পারবে।
এদিকে, রবিবার বিকাল ৫টায় বিচারক বোয়াসবার্গের আদালতে এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। এসিএলইউ এবং ডেমোক্রেসি ফরোয়ার্ডের পক্ষ থেকে আদালতের কাছে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানানো হবে, যাতে এই আইনের আওতায় বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা অন্য নাগরিকদেরও সুরক্ষা দেওয়া যায়।
ট্রাম্প এর আগেও ভেনেজুয়েলার এই গ্যাংটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, ট্রাম্প সম্ভবত এই আইনের অপব্যবহার করে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেন, যা প্রচলিত অভিবাসন আইনকে পাশ কাটিয়ে যাবে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে দ্রুতই আইনি চ্যালেঞ্জ জানানো হবে। কারণ, ২২২ বছর পুরনো এই আইনটি মূলত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের হাতে। তবে কোনো ‘আক্রমণ’ বা ‘হুমকি’র মুখে রাষ্ট্রপতি এই আইন প্রয়োগ করতে পারেন।
ইমিগ্র্যান্ট অধিকার কর্মী জুলিয়ানা ম্যাসেডো দো নাসিমেন্তো মনে করেন, “এই আইন প্রয়োগের কোনো যৌক্তিকতা নেই, কারণ অভিবাসন কোনো আক্রমণ নয় এবং আমরা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও নেই। অভিবাসীদের সন্ত্রাসী বা আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করাটা অত্যন্ত ভীতিকর।”
‘এলিযেন এনিমিজ অ্যাক্ট’-এর অধীনে থাকা ব্যক্তিদের কোনো প্রকার শুনানি বা আশ্রয় প্রার্থনার সুযোগ ছাড়াই বিতাড়িত করা যেতে পারে। এমনকি, যারা বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি চেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রেও এই আইন প্রযোজ্য হতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই আইনের অধীনে প্রায় ৩১ হাজার জার্মান, ইতালীয় এবং জাপানি বংশোদ্ভূত মানুষকে আটক করা হয়েছিল। অনেকের মতে, এই আইনের অপব্যবহার অতীতে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে সহায়ক হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান