মার্কিন লেখক মাইকেল লুইস এবং জন ল্যানচেস্টার এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বিভিন্ন খাতে অর্থ কাটছাঁট এবং সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আস্থাহীনতার বিষয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে লেখক মাইকেল লুইস তাঁর পছন্দের কয়েকজন লেখকের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি বিশেষ প্রবন্ধমালা তৈরির পরিকল্পনা করেন। এই প্রবন্ধমালার মূল উদ্দেশ্য ছিল, সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের প্রতি সম্মান জানানো এবং তাঁদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকা ভুল ধারণা দূর করা।
লুইস মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগে ব্যাপক কাটছাঁট হতে পারে।
লুইস এবং ল্যানচেস্টারের আলোচনায় উঠে আসে ট্রাম্প ও মাস্কের নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট। তাঁদের মতে, ট্রাম্প একজন ‘আস্থা ধ্বংসকারী’ এবং মাস্ক যেন খ্যাতির নেশায় আসক্ত।
তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সরকারি খাতে অর্থ কমানোর ফলে সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ব্যাহত হবে। উদাহরণস্বরূপ, জরুরি পরিস্থিতিতে ওষুধ সরবরাহ এবং খনি শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণার মতো বিষয়গুলোতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
জন ল্যানচেস্টার বিশেষভাবে মূল্যস্ফীতি পরিমাপের সূচক নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর মতে, এই সূচক তৈরি করতে সরকার কত বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে, যা অনেক সময় সাধারণ মানুষের কাছে গুরুত্বহীন মনে হতে পারে।
তবে এর মাধ্যমে অর্থনীতির একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায়।
সাক্ষাৎকারে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্যান্য দেশের জন্য, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের জন্য, কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা তুলে ধরেন। তাঁরা মনে করেন, সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ না করে, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করা উচিত।
এই আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, প্রভাবশালী গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের মালিক জেফ বেজোসের অবস্থান পরিবর্তন। আগে যিনি সরকারি কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন, তিনি এখন সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রসারের ওপর জোর দিচ্ছেন।
লেখকেরা মনে করেন, এই ধরনের পরিবর্তন গণতন্ত্রের জন্য একটি অশনি সংকেত।
লুইস এবং ল্যানচেস্টার তাঁদের সাক্ষাৎকারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্পের নীতিগুলো হয়তো শেষ পর্যন্ত জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরি করবে এবং সরকারি কার্যক্রমের প্রতি আস্থাহীনতা আরও বাড়াবে।
তাঁরা মনে করেন, এর ফলস্বরূপ, ভবিষ্যতে কোনো সরকার হয়তো পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জনগণের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সমর্থন পাবে না।
এই সাক্ষাৎকারে উঠে আসা বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি কার্যক্রমের গুরুত্ব, সুশাসন এবং জনগণের আস্থা—এগুলো যেকোনো দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
তাই, যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, একটি শক্তিশালী ও কার্যকর সরকারি ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান