মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ভারতীয় ছাত্রী, রাঞ্জানি শ্রীনিবাসন, যিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যার ওপর ডক্টরেট করছিলেন, তার ভিসা বাতিল হওয়ার পর দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, গত বছর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও, শুধুমাত্র তার মত প্রকাশের অধিকারের কারণে তাকে টার্গেট করা হয়েছে।
রাঞ্জানি শ্রীনিবাসন, যিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, দাবি করেছেন যে তিনি কোনো বিক্ষোভে অংশ নেননি। তিনি শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরে কিছু পোস্ট শেয়ার করেছিলেন এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ‘ফিলিস্তিনি মুক্তি’র সমর্থনে আর্কিটেকচারাল হিস্টোরিয়ান্স সোসাইটির একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (Department of Homeland Security – DHS) সম্প্রতি শ্রীনিবাসনকে চিহ্নিত করেছে, যারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির শিকার হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, শ্রীনিবাসন তার ভিসা আবেদনে কিছু ঘটনার উল্লেখ করেননি।
তবে, শ্রীনিবাসন এর প্রতিবাদ করে বলেছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে, শ্রীনিবাসন ২০১৬ সাল থেকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন। তার ভিসা বাতিলের পর, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই তার ছাত্রত্ব বাতিল করেছে।
তিনি আশঙ্কা করছেন, এর ফলে তার পাঁচ বছরের অধ্যবসায়ে অর্জিত ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, ভিসা বাতিল এবং ছাত্রত্ব হারানোর কারণে তার জীবন এবং ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে, ডিএইচএস সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম তার দেশত্যাগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন এবং দাবি করেছেন, শ্রীনিবাসন একটি কাস্টমস অ্যাপ ব্যবহার করে ‘নিজেই দেশ ত্যাগ করেছেন’। যদিও শ্রীনিবাসনের আইনজীবীরা এই দাবি অস্বীকার করেছেন।
তাদের মতে, ডিএইচএস-এর এই পদক্ষেপ মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়েছে।
শ্রীনিবাসনের আইনজীবীরা আরও জানিয়েছেন, ইমিগ্রেশন অফিসাররা কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই তার অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলেন এবং তাকে হয়রানি করেছিলেন। শ্রীনিবাসন জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম মেনে দেশ ত্যাগ করেছেন, কারণ ডিএইচএস তার ছাত্রত্ব বাতিল করার পর তাকে ১৫ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।
এই ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে মাহমুদ খলিল নামের আরেকজনের, যিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালেস্টাইনপন্থী কর্মী ছিলেন। তিনিও বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক রয়েছেন। তার স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং তিনি বর্তমানে একটি ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা ও অভিবাসন সংক্রান্ত এই বিতর্কিত ঘটনাগুলো, যুক্তরাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক প্রতিবাদের অধিকার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন