শিরোনাম: গভীর আর্থিক সংকটে ব্রিটেনের বৃহৎ পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, বাড়ছে গ্রাহক বিল
যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, ‘Thames Water’ (টেমস ওয়াটার) বর্তমানে এক গভীর আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। কোম্পানিটি বিশাল ঋণের বোঝা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে জর্জরিত।
পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, আগামী জুন মাসের মধ্যে তাদের নগদ অর্থের সংকট দেখা দিতে পারে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে গ্রাহকদের পানির বিল ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রে (ডকুমেন্টারি) এই সংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
টেমস ওয়াটারের বর্তমান পরিস্থিতি জানতে অনুসন্ধানী দলটি বেশ কয়েক মাস ধরে কোম্পানির ভেতরের চিত্র ধারণ করে। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস ওয়েস্টন-এর ভাষ্য অনুযায়ী, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
জানা গেছে, তাদের বার্ষিক পরিচালন মুনাফা প্রায় ১৪০ মিলিয়ন পাউন্ড, যেখানে ঋণের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন পাউন্ড।
বিপুল এই ঋণের বোঝা মূলত ২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে তৈরি হয়েছে, যখন প্রায় ২৭০ কোটি পাউন্ড লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছিল এবং ঋণের পরিমাণ তিনগুণ বেড়েছিল।
কোম্পানির পক্ষ থেকে যদিও দাবি করা হচ্ছে, তারা পরিস্থিতি পরিবর্তনের চেষ্টা করছে, কিন্তু কর্মীদের মধ্যে হতাশা স্পষ্ট।
পুরনো কর্মীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষের লাগাতার অর্থ কাটছাঁটের ফলে কাজের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি শোধনাগারের কর্মীদের মতে, তারা তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু লোকবল এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, কোম্পানির নতুন নেতৃত্ব, বিশেষ করে বর্জ্য জল ও জৈব সম্পদ পরিচালক টেসা ফায়ার্স এবং প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এস্থার শার্পলস-এর মতো কর্মকর্তাদের মধ্যে সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে।
তারা পরিস্থিতিকে স্বীকার করে এর সমাধানে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। তবে, তাদের মতে, পর্যাপ্ত সহায়তা ও অর্থের অভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রে কোম্পানির ভেতরের এই সংকট এবং এর কারণগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাগুলো দেখা যায়, তেমনি কর্মীদের আন্তরিকতাও ফুটে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তথ্যচিত্রটি কর্তৃপক্ষের জন্য একটি সতর্কবার্তা এবং সাধারণ মানুষের জন্য এই সংকট সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরি করেছে।
যুক্তরাজ্যের এই পরিস্থিতি আমাদের দেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।
টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে, সুপেয় জলের সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় সঠিক নজরদারি ও উপযুক্ত বিনিয়োগ অপরিহার্য। এছাড়া, জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে, পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দরকার।
তথ্য সূত্র: The Guardian