যৌন মিলন সব সময় আনন্দদায়ক হওয়া উচিত, কোনো কষ্ট নয়। কিন্তু অনেক মহিলারাই এই সময়ে নানা ধরণের শারীরিক কষ্টের সম্মুখীন হন।
অনেকের কাছেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলা কঠিন, লজ্জার কারণে অনেক সময় সমস্যার গভীরে যাওয়া হয় না। আসুন, এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
যৌন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা নারীদের মধ্যে বেশ সাধারণ একটি বিষয়। আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ান্স অ্যান্ড গাইনোকলজিস্টস-এর মতে, প্রতি ৪ জন নারীর মধ্যে প্রায় ৩ জন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে যৌন মিলনে ব্যথা অনুভব করেন।
কারো ক্ষেত্রে এটি স্বল্পকালীন সমস্যা, আবার কারো জন্য দীর্ঘমেয়াদী কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌন মিলনে ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো: শ্রোণী অঞ্চলের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, হরমোনের পরিবর্তন (যেমন মেনোপজ বা প্রসবের পর), মানসিক চাপ, অতীতের কোনো অস্ত্রোপচার অথবা আঘাত, অথবা কোনো আঘাতের স্মৃতি।
এইসব কারণে যোনিপথে শুষ্কতাও আসতে পারে, যা মিলনে ব্যথা বাড়ায়।
ডা. আনা ফাল্টার, যিনি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে পেলভিক ফ্লোর থেরাপিতে বিশেষজ্ঞ, তাঁর মতে, শ্রোণী অঞ্চলের পেশি শিথিল করার জন্য কিছু ব্যায়াম এক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে। এই ব্যায়ামের মাধ্যমে ভবিষ্যতে পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমানো যায়।
এই থেরাপিতে বিশেষ কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেমন – ট্রিগার পয়েন্ট থেরাপি। এই পদ্ধতিতে শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে পেশিগুলোকে শিথিল করা হয়।
এছাড়াও, রোগীরা নিজেরাও কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
তবে, শ্রোণী অঞ্চলের পেশি শিথিল করার ব্যায়ামের পাশাপাশি জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। যেমন: নিয়মিত যোগাভ্যাস করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা।
মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করতে হবে এবং নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
যাদের এই ধরনের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য সঙ্গীর সহযোগিতা খুবই জরুরি। মিলনের সময় ব্যথা অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করা উচিত।
কারণ, ব্যথা চালিয়ে গেলে ভবিষ্যতে যৌনতার প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। তাই, বিষয়টি নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।
একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং চিকিৎসার সময় একে অপরকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
যৌন মিলনে ব্যথা হলে, অনেক যুগলের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, ভালোবাসার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে অন্যান্য উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।
যেমন – আলিঙ্গন, চুম্বন অথবা হস্তমৈথুনের মাধ্যমে ভালোবাসার বন্ধন অটুট রাখা যায়।
যদি কোনো নারী এমন সমস্যার সম্মুখীন হন, তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
মনে রাখতে হবে, যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখা আমাদের সামগ্রিক সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন