উইসকনসিন সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে গর্ভপাতের অধিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে, যা অঙ্গরাজ্যের ভবিষ্যতের নীতি নির্ধারণ করতে পারে। আগামী এপ্রিল মাসের নির্বাচনে ডেমোক্রেট সমর্থিত প্রার্থী সুসান ক্রফোর্ড এই ইস্যুটি সামনে এনেছেন, কারণ তিনি মনে করেন এর মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করা যাবে।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান প্রার্থী ব্র্যাড শিমেল এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছেন।
এই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতে রক্ষণশীলদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে নাকি উদারপন্থীদের। উইসকনসিনের সুপ্রিম কোর্ট বর্তমানে ১৮৪৯ সালের একটি পুরনো গর্ভপাত সংক্রান্ত আইনের বৈধতা নিয়ে বিবেচনা করছে।
এই আইনে ‘অজাত শিশুর ইচ্ছাকৃত হত্যা’কে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। যদি এই আইনটি পুনরায় কার্যকর করা হয়, তাহলে গর্ভপাত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উনিশ শতকে যখন উইসকনসিন অঙ্গরাজ্য হিসেবে গঠিত হয়, তখন এই ধরনের গর্ভপাত বিরোধী আইন তৈরি হয়েছিল। সেই সময়ে, নারীর অধিকার এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞান আজকের মতো উন্নত ছিল না।
নারীদের কোনো আইনি পরিচয় ছিল না এবং তাদের সম্পত্তির উপর কোনো অধিকার ছিল না।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ‘রো বনাম ওয়েড’ মামলার রায় বাতিলের পর, যেখানে গর্ভপাতের অধিকারকে ফেডারেল পর্যায়ে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, এই ধরনের পুরোনো আইনের পুনরুজ্জীবন একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে, ১৮৬৪ সালের একটি পুরনো গর্ভপাত আইন নিয়ে অ্যারিজোনা রাজ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
বিভিন্ন রাজ্যে নারীদের ভোটাধিকার পাওয়ার আগে প্রণীত এমন পুরোনো আইনগুলো, যা গর্ভপাতকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, বর্তমানে আলাবামা, আরকানস, মিশিগান, মিসিসিপি, ওকলাহোমা, টেক্সাস এবং ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার মতো অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত নীতিকে প্রভাবিত করছে।
এই আইনগুলোতে প্রায়ই ধর্ষণের শিকার নারী বা ভ্রূণের জীবন রক্ষার মতো ক্ষেত্রেও গর্ভপাতের সুযোগ রাখা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে, গর্ভপাত করলে কারাদণ্ডের বিধানও রয়েছে।
উইসকনসিনের আসন্ন নির্বাচনে, ডেমোক্রেট ভোটাররা গর্ভপাতের অধিকার রক্ষার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী। তারা মনে করেন, এই ইস্যুটি তাদের ভোটদানে উৎসাহিত করবে।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান ভোটাররা অভিবাসন এবং অর্থনীতির মতো বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদিও গর্ভপাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, তবে ২০২৩ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচনে এর প্রভাব কিছুটা কম হতে পারে। সেই নির্বাচনে গর্ভপাতের অধিকার একটি প্রধান বিষয় ছিল এবং এর মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গিয়েছিল।
তবে, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্বাচন অঙ্গরাজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে গর্ভপাতের অধিকারের ভবিষ্যৎ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস