লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে শুক্রবার এক ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। বিমানবন্দরের কাছে একটি সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত এই বিমানবন্দরে বিমান চলাচল সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়।
এর ফলে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন, অনেক ফ্লাইট বাতিল করা হয় এবং কিছু বিমানকে অন্য বিমানবন্দরে অবতরণ করতে বাধ্য করা হয়।
ঘটনার শিকার হওয়াদের মধ্যে ছিলেন সদ্য বিবাহিত বিলি ও রিচার্ড। তারা তাদের মধুচন্দ্রিমার ছুটি কাটিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে করে বাড়ি ফিরছিলেন।
তাদের গন্তব্য ছিল লন্ডন। কিন্তু হিথরোর এই পরিস্থিতির কারণে তাদের বিমান জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অবতরণ করতে বাধ্য হয়।
বিলি জানান, “আমরা যখন ঘুম থেকে উঠলাম, তখন জানতে পারলাম বিমানের পাইলট ঘোষণা করেছেন হিথরোর পাওয়ার সমস্যার কারণে ফ্লাইট ডাইভার্ট করা হচ্ছে। আমরা তখন জার্মানির কাছাকাছি চলে এসেছি।”
শুধু বিলি ও রিচার্ডই নন, এই বিশৃঙ্খলার শিকার হন আরও অনেকে। কেউ প্রিয়জনের সাথে দেখা করতে, আবার কেউ জরুরি কাজে লন্ডন যাচ্ছিলেন।
ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তাদের অনেকেরই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে বাধ্য হন।
বিমানবন্দরের কর্মীরাও ছিলেন হতভম্ব।
এক যাত্রী কিম মিক্কেল স্কিবরেক জানান, তিনি মিনিয়াপলিস থেকে লন্ডন হয়ে অসলোতে তার অসুস্থ বাবার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হিথরোর ঘটনার কারণে তার বিমানটি মাঝপথ থেকে আমেরিকায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
একই ফ্লাইটের যাত্রী অ্যাবি হার্টস তার স্বামী ও দুই সন্তানের সাথে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডন যাচ্ছিলেন। শুক্রবার সকালে তিনি জানান, তারা অন্য একটি ফ্লাইটে করে শনিবার সকালে লন্ডনে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, যদিও অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই তাদের সেখানে পৌঁছানো কঠিন হবে।
পরিস্থিতি এতটাই জটিল ছিল যে, অনেক বিমানকে অন্য বিমানবন্দরে নামতে হয়। হিথরোর পরিবর্তে কিছু ফ্লাইট লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরে অবতরণ করে, যেখানে যাত্রীদের দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
বিপর্যয়ের মধ্যে, বিলি ও রিচার্ড ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরে কাতার এয়ারওয়েজের কর্মীদের কাছ থেকে হোটেলের ভাউচার পান।
কিন্তু তারা কখন বাড়ি ফিরতে পারবেন, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। পরে তারা নিজেরাই একটি বিকল্প ব্যবস্থা করেন এবং ব্রাসেলস থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ইউরোস্টার ট্রেনের টিকিট কাটেন।
বিলি জানান, “আমরা এখন খুবই ক্লান্ত। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ভ্রমণ করছি। লন্ডনে পৌঁছাতে আরও ছয় ঘণ্টা ট্রেনের যাত্রা বাকি।”
এই ঘটনার জেরে বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচলে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরেও এর প্রভাব দেখা যায়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন