ভারতের একজন জনপ্রিয় কমেডিয়ান, কুনাল কামরা, রাজনৈতিক ব্যঙ্গ করার অভিযোগে বর্তমানে পুলিশের তদন্তের অধীনে রয়েছেন। মহারাষ্ট্র রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেকে নিয়ে একটি কৌতুক করার কারণে তার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই ঘটনার জেরে কমেডি ক্লাব ‘দ্য হ্যাবিট্যাট’-এর উপর হামলা চালানো হয় এবং ক্লাবের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়।
জানা গেছে, কামরা তার কৌতুক পরিবেশনার সময় শিন্ডেকে সরাসরি উল্লেখ না করে, একটি গানে ‘গাদ্দার’ (বিশ্বাসঘাতক) শব্দটি ব্যবহার করেন, যা সম্ভবত ২০২২ সালের একটি রাজনৈতিক ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত ছিল। এই ঘটনায় শিন্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা দলের সদস্যরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান।
পরবর্তীতে, মুম্বাইয়ে ‘দ্য হ্যাবিট্যাট’-এ হামলা চালানো হয়, যেখানে কামরা তার অনুষ্ঠানটি করেছিলেন। ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শিবসেনার দলীয় চিহ্নযুক্ত স্কার্ফ পরা কিছু লোক ক্লাবটির চেয়ার ভাঙচুর করছে এবং ভেতরের জিনিসপত্র তছনছ করছে। পুলিশ এই ভাঙচুরের ঘটনাও খতিয়ে দেখছে।
শিবসেনা মুখপাত্র কৃষ্ণ হেগড়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, কামরার কথা মহারাষ্ট্রের জনগণকে “অপমান” করেছে। তিনি কামরাকে গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করার দাবি জানান। দলের আরেক নেতা নরেশ মাস্কে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কামরা এরপর থেকে সম্ভবত ভারতে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
তবে, কামরা তার মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে রাজি হননি। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির প্রতি ব্যঙ্গ করার স্বাধীনতা থাকা উচিত।” মহারাষ্ট্রের কিছু বিরোধী রাজনৈতিক নেতা কামরার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
শিন্ডের প্রাক্তন রাজনৈতিক মিত্র আদিত্য ঠাকরে বলেছেন, “কেবল একজন দুর্বল, ভীতু ব্যক্তিই কারও গানের প্রতিক্রিয়ায় এমনটা করতে পারে।”
‘দ্য হ্যাবিট্যাট’ কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সাময়িকভাবে তাদের কমেডি ক্লাব বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বলেছে, “আমরা কোনো শিল্পীর পরিবেশিত কন্টেন্টের সঙ্গে জড়িত নই, তবে সাম্প্রতিক ঘটনা আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে।”
কুনাল কামরার বিরুদ্ধে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ২০২০ সালে, সুপ্রিম কোর্ট তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে, কারণ তিনি সামাজিক মাধ্যমে বিচার বিভাগ এবং বিচারপতিদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন।
তিনি একবার ভারতকে একটি “রসবোধহীন সমাজ” হিসেবেও বর্ণনা করেছিলেন এবং এর আগে ডানপন্থী দলগুলোর হুমকির কারণে প্রায় ১০০টির মতো অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু, অনেক সময় দেখা যায়, কৌতুক অভিনেতাদের তাদের কৌতুক পরিবেশনার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের রোষানলে পড়তে হয়।
২০২১ সালে, কমেডিয়ান বীর দাসের একটি পরিবেশনার জেরে তাকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছিল।
এই ঘটনাগুলো ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ভিন্ন মতের প্রতি অসহিষ্ণুতার একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন