যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে এক ভয়াবহ ঘটনায় এক নারী তার সৎ ছেলেকে প্রায় দুই দশক ধরে বন্দী করে নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।
অভিযুক্ত ৫৬ বছর বয়সী কিম্বার্লি সুলিভানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন।
ওয়াটারবেরি শহরের পুলিশ জানিয়েছে, ৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেতে গত ফেব্রুয়ারিতে সুলিভানের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয় এবং বর্তমানে তিনি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি ১১ বছর বয়স থেকেই বন্দী ছিলেন।
তাকে একটি ছোট ঘরে আটকে রাখা হতো এবং প্রতিদিন সামান্য খাবার দেওয়া হতো। ধীরে ধীরে তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়ে।
এক পর্যায়ে তাকে দিনের প্রায় পুরোটা সময় ঘরে বন্দী করে রাখা হতো। এমনকি পরিবারের পোষা কুকুরের দেখাশোনার জন্য দিনে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য তাকে বাইরে যেতে দেওয়া হতো।
আদালতের নথিপত্রে জানা যায়, ওই ব্যক্তি যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তেন, তখন থেকে খাবারের জন্য বাইরে যাওয়া শুরু করেন।
এর পরেই সুলিভান তাকে ঘরে বন্দী করে ফেলেন এবং স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নেন। নির্যাতনের শিকার ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
তার ওজন ছিল মাত্র ৭০ পাউন্ড (প্রায় ৩২ কেজি) এবং উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (প্রায় ১.৭৫ মিটার)।
ওয়াটারবেরি শহরের পুলিশ প্রধান ফ্রেড স্পাগনোলোর ভাষ্যমতে, “আমি ৩৩ বছর ধরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। এমন অমানবিক ঘটনা আগে কখনো দেখিনি।”
এদিকে, ভুক্তভোগীর মা ৫২ বছর বয়সী ট্র্যাসি ভ্যালারান্ড জানান, তিনি তার ছেলেকে ছোটবেলায় প্রতিপালনের জন্য দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “আমার ছেলে বছরের পর বছর ধরে অত্যাচার, নির্যাতন ও অবহেলার শিকার হয়েছে, যেখানে তার ভালোভাবে দেখাশোনা করা উচিত ছিল।”
ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং উদ্বেগের বিষয়। স্থানীয় মেয়র পল কে. পেরেনেস্কি জানিয়েছেন, তারা এই কঠিন সময়ে ভুক্তভোগীকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, ২০০৪ সালে শিশু ও পরিবার বিষয়ক বিভাগের (ডিসিএফ) পক্ষ থেকে এবং পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েকবার ওই বাড়িতে খোঁজ নেওয়া হলেও নির্যাতনের বিষয়টি ধরা পড়েনি।
সেসময় বাড়িটিকে পরিচ্ছন্ন এবং বসবাসযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
কিম্বার্লি সুলিভানের আইনজীবী জানিয়েছেন, তার মক্কেল নির্দোষ এবং তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন