মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কেন্দ্রে বন্দীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ: উদ্বিগ্ন মানবাধিকার সংস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এবং লুইজিয়ানার কিছু ডিটেনশন সেন্টারে (আটক কেন্দ্র) বন্দীদের প্রতি অমানবিক আচরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
মানবাধিকার সংস্থা এবং আইনজীবীরা সেখানকার পরিবেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি, ফিলিস্তিনি অ্যাক্টিভিস্ট মাহমুদ খলিল এবং জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির গবেষক বাদার খান সুরীর বন্দীত্বকে কেন্দ্র করে এই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে।
জানা গেছে, এই কেন্দ্রগুলোতে বন্দীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবার অভাব, এবং সীমিত সুযোগ-সুবিধা সহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, আহত অবস্থায় শিকল পরানো, নির্জন কারাবাসে দূষিত খাবার সরবরাহ করা, এবং বাথরুমে ময়লা ত্যাগ করার মতো ঘটনা।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, যেমন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (ACLU), এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে।
মাহমুদ খলিল, যিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এবং ফিলিস্তিনি অধিকার কর্মী, তাকে সম্ভাব্য বিতাড়নের আশঙ্কায় লুইজিয়ানার একটি কেন্দ্রে দু’সপ্তাহ ধরে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, বাদার খান সুরী, যিনি জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির গবেষণা ফেলো, তিনিও একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
আটক কেন্দ্রগুলো সাধারণত লোকচক্ষুর অন্তরালে, জনসমাগম থেকে দূরে স্থাপন করা হয়।
ফলে, বন্দীদের পরিবার এবং আইনজীবীদের সেখানে যেতে এবং তাদের সঙ্গে দেখা করতে বেশ অসুবিধা হয়।
আটক কেন্দ্রগুলোতে বন্দীদের বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ সীমিত থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন বিষয়ক নীতি কঠোর করা হয়।
সেই সময় থেকেই এই ধরনের ডিটেনশন সেন্টারগুলো নিয়ে বিতর্ক বাড়ে।
লুইজিয়ানাতে বেশ কয়েকটি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) ডিটেনশন সেন্টার রয়েছে, যা মূলত বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয়।
এই কেন্দ্রগুলোতে বন্দীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অনেক অভিযোগ উঠেছে।
মানবাধিকার সংস্থা ‘রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্টনি এনরিকেজ বলেছেন, এই ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে বন্দীদের ওপর নির্যাতন একটি নিয়মিত ঘটনা।
তাদের ফোন ব্যবহারের সুযোগ সীমিত, চিকিৎসা পরিষেবা অপ্রতুল এবং থাকার পরিবেশও খুবই খারাপ।
টেক্সাসের ডিটেনশন সেন্টারগুলোতেও একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সেখানে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা অবহেলা, একাকী কারাবাস, এবং লিঙ্গগত বৈষম্যের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আইনজীবীরা সোচ্চার হয়েছেন।
টেক্সাসের একটি ডিটেনশন সেন্টারে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগও রয়েছে।
মাহমুদ খলিলের আইনজীবী জানিয়েছেন, তার মক্কেল বন্দী অবস্থায় মানসিক চাপে রয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
বাদার খান সুরীর আইনজীবীর অভিযোগ, তার সঙ্গেও কর্তৃপক্ষের খারাপ আচরণ করা হচ্ছে।
আটকের পর মাহমুদ খলিলকে প্রথমে নিউইয়র্ক থেকে লুইজিয়ানায় আনা হয়।
পরে আদালতের নির্দেশে তার মামলা নিউজার্সিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
তবে, তিনি এখনো লুইজিয়ানাতেই বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।
আটক কেন্দ্রগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নতুন নয়।
অতীতেও এসব স্থানে বন্দীদের ওপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতন, এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবার অভাবের অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে বন্দীদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, ডিটেনশন সেন্টার পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বন্দীদের অধিকার রক্ষায় আরও সক্রিয় হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন