স্কুলে আমরা কত কিছুই তো শিখি, কিন্তু জীবনের পথে পা বাড়ানোর পর কিছু জরুরি দক্ষতার অভাব অনুভব করি। আমাদের চারপাশে এমন অনেক যুবক-যুবতী আছেন, যারা হয়তো ভালো ফলাফল করেছেন, কিন্তু বাস্তব জীবনের কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় তাদের অজানা।
এই বিষয়গুলো জানা থাকলে জীবনটা হয়তো আরও সহজ হতো। সম্প্রতি বিভিন্ন গবেষণা ও অভিজ্ঞতার আলোকে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার কথা তুলে ধরা হলো, যা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই দরকারি।
১. আর্থিক ব্যবস্থাপনা:
টাকা-পয়সা ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব আমাদের সমাজে সবসময়ই অনেক বেশি। কিভাবে বাজেট তৈরি করতে হয়, সঞ্চয় করতে হয়, দেনা-পাওনা হিসাব রাখতে হয় – এই বিষয়গুলো স্কুল জীবনে শেখানো উচিত।
কারণ, বর্তমান যুগে অনলাইনে কেনাকাটা এবং বিভিন্ন অফারের কারণে দ্রুত ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে, যা আর্থিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
২. সময় ব্যবস্থাপনা:
সময়ানুবর্তিতা ও সময়কে কাজে লাগানোর গুরুত্ব অপরিসীম। পরীক্ষার সময় পড়াগুলো গুছিয়ে আনা থেকে শুরু করে অফিসের কাজ সময় মতো শেষ করা—সবক্ষেত্রেই সময় ব্যবস্থাপনার জুড়ি নেই।
সময়মতো কাজ শেষ করার জন্য পরিকল্পনা তৈরি, অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং ছোট ছোট অংশে ভাগ করে কাজ করার কৌশলগুলো জানা জরুরি।
৩. আত্মরক্ষা:
বর্তমান সমাজে নিজের ও নিজের সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিভাবে নিজের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়, তা শেখা দরকার।
কোনো বিপদের আভাস পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কৌশল জানা থাকলে অনেক বড় ক্ষতি এড়ানো যেতে পারে।
৪. ছোটখাটো মেরামত:
আমাদের দেশে, বিশেষ করে শহর অঞ্চলে, এখন অনেক পরিবারে ছোটখাটো মেরামতের কাজ করার লোক পাওয়া কঠিন। বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া থেকে শুরু করে দরজার ছিটকিনি লাগানো—এই ধরনের সাধারণ কাজগুলো জানা থাকলে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয় না এবং অনেক অর্থ সাশ্রয় করা যায়।
৫. কিভাবে ব্যর্থতাকে গ্রহণ করবেন:
জীবনে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও আসবে। পরীক্ষায় খারাপ ফল থেকে শুরু করে ব্যবসায় লোকসান—জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসবে, যেখানে আমরা হতাশ হতে পারি।
ব্যর্থতাকে ভয় না পেয়ে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে কীভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হয়, সেই মানসিকতা তৈরি করা প্রয়োজন।
৬. আইডিয়া উপস্থাপন:
নিজের আইডিয়াগুলো গুছিয়ে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অন্যের সামনে তুলে ধরার দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে নিজের মতামত প্রকাশ করা হোক বা কোনো ব্যবসায়িক পরিকল্পনা উপস্থাপন করা—সবার কাছে নিজের ভাবনাগুলো সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়াটা জরুরি।
৭. প্রাথমিক চিকিৎসা:
হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনায় আহত হলে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান থাকলে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব। কিভাবে ব্যান্ডেজ করতে হয়, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সিপিআর দিতে হয়—এসব জরুরি বিষয়গুলো জানা থাকলে যেকোনো পরিস্থিতিতে সাহায্য করা যায়।
৮. দর কষাকষি:
বাজারে জিনিস কেনার সময় বা কোনো সেবার মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে দর কষাকষি করার দক্ষতা প্রয়োজন হয়। এই দক্ষতা থাকলে আপনি আপনার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারবেন এবং সঠিক মূল্যে জিনিস কিনতে পারবেন।
৯. প্রতারণা শনাক্তকরণ:
বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রতারণা একটি সাধারণ সমস্যা। অনলাইনে ভুয়া অফার, লটারি বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
তাই, কিভাবে প্রতারণা শনাক্ত করতে হয় এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হয়, সেই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা দরকার।
এই বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগিয়ে তোলার জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
সিলেবাসে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে, অথবা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: বিভিন্ন গবেষণা ও বিশেষজ্ঞ মতামত অবলম্বনে।