শিরোনাম: যাজক শিল্পী রুপনিকের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি পোপের সংগঠন
নিউ ইয়র্ক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পোপ ফ্রান্সিসের নেতৃত্বাধীন জেসুইট ধর্মীয় সংগঠন, বিতর্কিত শিল্পী ফাদার মার্কো রুপনিকের বিরুদ্ধে যৌন, মানসিক ও আধ্যাত্মিক নির্যাতনের শিকার হওয়া প্রায় ২০ জন নারীর ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে। রুপনিক একসময় জেসুইট সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন এবং চার্চের একজন বিখ্যাত শিল্পী হিসেবে পরিচিত।
এই ঘটনার সূত্রপাত কয়েক বছর আগে, যখন ওই নারীরা রুপনিকের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন। অভিযোগ ছিল, রুপনিক প্রায় ৩০ বছর ধরে তাদের ওপর শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক নিপীড়ন চালিয়েছেন। নির্যাতিতাদের মধ্যে এমনও ছিলেন, যারা রুপনিকের সঙ্গে শিল্পকর্ম তৈরিতে সহযোগিতা করতেন। অভিযোগের আঙুল ওঠে ভ্যাটিকানের দিকেও, কারণ প্রথমে তারা এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
রুপনিক স্লোভেনিয়ার নাগরিক। তিনি বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক চার্চ ও বিভিন্ন বেসিলিকার জন্য মোজাইক তৈরি করে খ্যাতি অর্জন করেছেন। ভ্যাটিকানেও তার শিল্পকর্ম রয়েছে।
জেসুইটদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফাদার জোহান ভারসুচেন নামক একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নির্যাতিতাদের কাছে ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে রুপনিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারসুচেন জানান, রুপনিক সত্য ও ক্ষতিপূরণের পথে হাঁটতে রাজি হননি। এই কারণে জেসুইট সম্প্রদায় এখন তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে এবং নিরাময়ের পথ খুঁজছে।
ক্ষতিপূরণ প্রদানের এই প্রস্তাব ব্যক্তিগত, বেনামী এবং প্রতিটি মামলার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে। ক্ষতিপূরণের ধরন নির্যাতিত ব্যক্তির চাহিদার ওপর নির্ভর করবে। এর মধ্যে আর্থিক সহায়তা, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ এবং প্রয়োজনে কাজের সুযোগ তৈরি করা যেতে পারে।
নির্যাতিতাদের আইনজীবী, লরা স্ক্রো, জেসুইটদের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি ভ্যাটিকানের ‘ডিকাস্টারি ফর দ্য ডকট্রিন অফ দ্য ফেইথ’ (ধর্মীয় মতবাদ বিষয়ক বিভাগ)-এর প্রতি রুপনিকের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। স্ক্রো বলেন, “এখন আর দেরি করা উচিত না, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
২০২২ সালের শেষের দিকে রুপনিকের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। এর আগে ২০২০ সালে, তিনি কনফেশনাল ব্যবহারের মাধ্যমে এক নারীর পাপ মোচন করেছিলেন, যা ক্যাথলিক চার্চের গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ঘটনার জেরে তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
এই ঘটনার পর পোপ ফ্রান্সিসের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তবে তিনি বরাবরই এই মামলায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বর্তমানে, ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার কথা থাকলেও, উপযুক্ত বিচারক খুঁজে বের করতে সমস্যা হচ্ছে।
রুপনিক এখনও পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি তিনি জেসুইট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও সহযোগিতা করতে রাজি হননি। তার সমর্থকেরা এই ঘটনাকে ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস