পাকিস্তানের পার্বত্য অঞ্চল: একটি অনাবিষ্কৃত গন্তব্য।
পাকিস্তানের উত্তরে অবস্থিত পর্বতমালা, বিশেষ করে কারাকোরাম রেঞ্জ (Karakoram Range), যেন এক লুকানো রত্ন। ভ্রমণপিপাসু বাঙ্গালীদের জন্য এই অঞ্চলটি হতে পারে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
একদিকে যেমন এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে, তেমনই এখানকার মানুষের সংস্কৃতি আর আতিথেয়তাও মন জয় করে নেয়।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ (Islamabad) থেকে শুরু করে, এই ভ্রমণের মূল আকর্ষণ হলো বালতিস্তান (Baltistan) অঞ্চল। এখানকার কারাকোরাম পর্বতমালা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণী।
প্রতি বছর যেখানে নেপালের হিমালয়ে (Himalayas) প্রায় দশ লক্ষের বেশি পর্যটকের আনাগোনা, সেখানে কারাকোরামে আসেন মাত্র ১৫ হাজারের মতো অভিযাত্রী। এর মানে হলো, এখানে প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করার সুযোগ অনেক বেশি।
বালতিস্তানের পথে: সংস্কৃতি আর প্রকৃতির মেলবন্ধন।
বালতিস্তানের পথে যাত্রা করলে, এখানকার মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। এখানকার অধিবাসীরা মূলত বালতি (Balti) সম্প্রদায়ের মানুষ, যাদের সংস্কৃতি তিব্বতের (Tibet) সঙ্গে সম্পর্কিত।
এখানকার মানুষেরা শিয়া (Shia) মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, যা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি (Sunni) মুসলিমদের থেকে ভিন্ন।
স্কর্দুর (Skardu) পুরাতন বাজারে (Old Bazaar) গেলে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশে তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এখানে বিভিন্ন ট্রেকিং (Trekking) ও হাইকিংয়ের (Hiking) সরঞ্জাম পাওয়া যায়।
এছাড়াও, এখানকার স্থানীয় বাজারে কেনাকাটার সুযোগ রয়েছে, যেখানে স্থানীয় কারুশিল্প ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক পাওয়া যায়।
পর্বতারোহণের স্বর্গ: কারাকোরামের হাতছানি।
কারাকোরাম পর্বতমালায় ট্রেকিং করা নিঃসন্দেহে একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। এখানকার পাহাড় পথের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নাংমা ভ্যালি (Nangma Valley)। এখানে গেলে পাহাড়ের বিশালতা আর প্রকৃতির নীরবতা এক ভিন্ন জগৎ তৈরি করে।
এছাড়াও, আমিন ব্রাক বেস ক্যাম্পের (Amin Brakk base camp) কাছাকাছি গেলে ট্রেকাররা (Trekker) প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।
খরচ ও ভিসা সংক্রান্ত তথ্য।
বর্তমানে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২৬টি দেশের পর্যটকদের জন্য পাকিস্তান সরকার ভিসা ফি (Visa fee) মওকুফ করেছে। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বড় সুবিধা।
ভ্রমণের খরচ নির্ভর করে রুটিং, থাকা-খাওয়ার ধরনের ওপর। তবে, অন্যান্য জনপ্রিয় গন্তব্যের তুলনায় এখানে খরচ তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে।
কেন যাবেন?
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, ট্রেকিং করতে পছন্দ করেন এবং নতুন সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য পাকিস্তান একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।
এখানকার পাহাড়, উপত্যকা, স্থানীয় সংস্কৃতি এবং মানুষের উষ্ণ আতিথেয়তা – সব মিলিয়ে একটি অবিস্মরণীয় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক