মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ‘সিবিপি ওয়ান’ অ্যাপ ব্যবহার করে আশ্রয় চেয়ে আসা অভিবাসীদের আইনি সুযোগ সুবিধা বাতিল করতে চলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। সোমবার সরকারি সূত্রে এই খবর জানানো হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের আমলে চালু হওয়া এই অ্যাপের মাধ্যমে আসা অভিবাসীদের এখন দ্রুত দেশ ছাড়তে বলা হচ্ছে।
খবর অনুযায়ী, ঠিক কতজন অভিবাসী এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে, ‘সিবিপি ওয়ান’ অ্যাপ ব্যবহার করে প্রায় ৯ লক্ষাধিক মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সাধারণত, এই অভিবাসীদের দুই বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের কাজেরও সুযোগ ছিল।
এই সুযোগ দেওয়া হয়েছিল ‘প্যারোল’ নামক একটি বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে, যা প্রেসিডেন্ট তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করে দিয়ে থাকেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (Department of Homeland Security) জানিয়েছে, সীমান্ত সুরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য এই ‘প্যারোল’ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে, সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘সিবিপি ওয়ান’ -এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অভিবাসীদের কাছে ইতোমধ্যে তাঁদের আইনি সুবিধা বাতিলের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে, কতজন এই নোটিশ পেয়েছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের জন্য এই অভিবাসীদের একই অ্যাপ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যেটির মাধ্যমে তাঁরা প্রবেশ করেছিলেন। বর্তমানে অ্যাপটির নাম পরিবর্তন করে ‘সিবিপি হোম’ রাখা হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ থেকে হন্ডুরান একটি পরিবারকে পাঠানো একটি ইমেইলে বলা হয়েছে, “আপনাদের এখনই যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করা উচিত।” এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই একই ধরনের ইমেইল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
অভিবাসীদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী একটি অলাভজনক সংস্থা ‘আল ওত্রো লাদো’ জানিয়েছে, যাদের এই ধরনের নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকে হন্ডুরাস, এল সালভador এবং মেক্সিকো থেকে এসেছেন।
বাইডেন প্রশাসনের নীতি অনুযায়ী, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের প্রবণতা কমাতে ‘সিবিপি ওয়ান’ অ্যাপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের একটি বৈধ পথ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর, এই অ্যাপের মাধ্যমে নতুন করে আর কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ফলে, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে মেক্সিকোতে থাকা বহু মানুষ এই সিদ্ধান্তের কারণে বিপাকে পড়েন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মতে, বাইডেন সরকারের আমলে ‘প্যারোল’ ব্যবস্থার ব্যাপক ব্যবহারের ফলেই যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৫২ সাল থেকে কোনো প্রেসিডেন্টের আমলেই এত বেশি ‘প্যারোল’ ব্যবহার হয়নি।
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলার প্রায় ৫ লক্ষ ৩২ হাজার অভিবাসীর জন্য দেওয়া ‘প্যারোল’-ও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যারা নিজেদের খরচে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।
এছাড়াও, প্রায় ৬ লক্ষ ভেনেজুয়েলার এবং ৫ লক্ষ হাইতির নাগরিকের ‘টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্ট্যাটাস’ (Temporary Protected Status) বাতিলের ঘোষণা করা হয়েছে।
যদিও একজন ফেডারেল বিচারক এই সিদ্ধান্তের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ‘টিপিএস’ হল এমন একটি ব্যবস্থা, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কোনো ব্যক্তির নিজ দেশে ফেরা নিরাপদ না হলে, তাঁদের ১৮ মাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দেয়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস