ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে, রুশ সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় দুই চীনা নাগরিককে আটক করেছে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার এই তথ্য জানান। খবর অনুযায়ী, রুশ বাহিনীর সঙ্গে আরও অনেক চীনা নাগরিকের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বেইজিংকে দ্রুত যোগাযোগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইরানের পর চীন তৃতীয় দেশ হতে যাচ্ছে যারা রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দিতে পারে।
এর আগে ইরান রাশিয়ার কাছে ড্রোন সরবরাহ করেছে এবং উত্তর কোরিয়া সৈন্য পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করার পর থেকে চীন মস্কোর প্রতি জোরালো কূটনৈতিক সমর্থন জুগিয়েছে। একইসঙ্গে জ্বালানি এবং ভোগ্যপণ্যের বাণিজ্যের মাধ্যমে তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে।
জেলেনস্কি আরও জানান, দোনেৎস্ক অঞ্চলের তারাসিভকা এবং বিলোহোরিভকা গ্রামের কাছে চীনা সৈন্যদের সঙ্গে ইউক্রেনীয় সেনাদের সংঘর্ষ হয়। এতে ছয়জন চীনা সেনা জড়িত ছিল এবং তাদের মধ্যে দুজনকে বন্দী করা হয়েছে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিরবিহা এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বার্তায় বলেন, “রাশিয়ার আগ্রাসনে অংশ নেওয়া চীনা নাগরিকদের বিষয়টি চীনের শান্তি প্রতিষ্ঠার ঘোষণার পরিপন্থী এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে বেইজিংয়ের বিশ্বাসযোগ্যতাকে দুর্বল করে।” তিনি এ বিষয়ে ব্যাখ্যার জন্য চীনের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছেন।
এদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষই আসন্ন গ্রীষ্মকালীন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি অ্যানালাইসিসের সিনিয়র ফেলো নিকো ল্যাঞ্জ সোমবার এক বিশ্লেষণে বলেছেন, “আমি যুদ্ধবিরতি বা শান্তির কোনো ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি না, বরং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অনেক লক্ষণ দেখছি।”
অন্যদিকে, কিয়েভে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডি ওয়েভারের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি মিলিত হন। ডি ওয়েভার ইউক্রেনকে ১ বিলিয়ন ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১,১৮০ কোটি টাকা) সহায়তার ঘোষণা দেন। বৈঠকে তাঁরা যৌথ সামরিক উৎপাদন এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা খাতে বেলজিয়ামের বেসরকারি বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়াও, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন। বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি দুই দেশের দূতাবাসগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক করা এবং কূটনীতিকদের সংখ্যা বাড়ানো সংক্রান্ত আলোচনার অংশ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস