**পূর্ব আফ্রিকার দ্বীপময় তানজানিয়া: বাংলাদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এক নতুন দিগন্ত**
বঙ্গোপসাগরের উপকূলের দেশ বাংলাদেশের মানুষের সমুদ্র আর দ্বীপ ভালোবাসার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তাই যারা একটু অন্যরকম সমুদ্র ভ্রমণের স্বাদ নিতে চান, তাদের জন্য তানজানিয়ার দ্বীপগুলো হতে পারে এক দারুণ গন্তব্য।
পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিতে রয়েছে প্রায় ৯০০ মাইলেরও বেশি দীর্ঘ উষ্ণ উপকূলরেখা, আর এর পাশেই যেন মুক্তোর মতো ছড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি দ্বীপ।
এখানকার সংস্কৃতি, প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, আর নানান অভিজ্ঞতার সুযোগ তানজানিয়ার দ্বীপগুলোকে করে তুলেছে অসাধারণ।
এই দ্বীপগুলি ‘সোয়াহিলি উপকূল’ নামেও পরিচিত, যেখানে বান্টু সংস্কৃতি ও ইসলামি সংস্কৃতির এক দারুণ মিশ্রণ দেখা যায়।
এখানকার সমুদ্রজীবনও পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়, যেখানে তিমি হাঙ্গরের মতো (যা তানজানিয়ার আইন দ্বারা সুরক্ষিত) বিরল প্রজাতির দেখা মেলে।
আসুন, তানজানিয়ার কয়েকটি অসাধারণ দ্বীপের গল্প শোনা যাক।
প্রথমেই আসা যাক জামেইরা থান্ডা দ্বীপের (Jumeirah Thanda Island) কথায়।
যারা তানজানিয়াতে প্রথমবার ভ্রমণ করতে যান, তাদের জন্য এই দ্বীপটি হতে পারে আদর্শ।
সাদা বালুকাময় সৈকত, স্বচ্ছ নীল জল, আর সবুজ গাছপালা—সবকিছু মিলে দ্বীপটি যেন এক টুকরো স্বর্গ।
এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো প্রবাল প্রাচীর পুনরুদ্ধার কার্যক্রম, যেখানে পর্যটকেরা সরাসরি অংশ নিতে পারেন।
স্থানীয় সংরক্ষণ দলের সাথে যোগ দিয়ে তারা প্রবালের আশেপাশে ডুব দিতে পারেন, এমনকি নিজেরাই প্রবালের ফ্র্যাগমেন্ট (ক্ষুদ্র অংশ) তৈরি করতে পারেন।
মেরিন বায়োলজিস্ট রিঅনে লান এর মতে, “এই সংরক্ষিত এলাকা মাছের প্রজনন ক্ষেত্র, যেখানে তারা বেড়ে ওঠে।
এখানে ব্ল্যাকটিপ রিফ হাঙ্গর, সবুজ কচ্ছপ, এমনকি জায়ান্ট গ্রাউপার, ঈগল রে এবং মাছ শিকারি ঈগলদেরও দেখা যায়।”
এরপর আসা যাক মাফিয়া দ্বীপের (Mafia Island) গল্পে।
নামটি কিছুটা অদ্ভুত শোনালেও, এই দ্বীপটি যেন প্রকৃতির এক নীরব আশ্রয়স্থল।
এখানে রয়েছে সাদা বালির সমুদ্র সৈকত, জেলে গ্রাম, আর একটি বিশাল সামুদ্রিক পার্ক।
পর্যটকেরা এখানে তিমি হাঙ্গর দেখতে পান, যা সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে দেখা যায়।
ঐতিহাসিক নিদর্শনে আগ্রহী মানুষের জন্য চোল দ্বীপ (Chole Island) একটি বিশেষ জায়গা।
ম্যানগ্রোভ বন দ্বারা বেষ্টিত এই দ্বীপে এককালে ছিল সোয়াহিলি উপকূলের বাণিজ্য কেন্দ্র।
এখনো এখানে পুরনো জার্মান কারাগার ও কাস্টম হাউসের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।
এছাড়াও, এখানে রয়েছে বাদুড়ের একটি বিশাল আবাসস্থল।
যারা একটু শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য পেম্বা দ্বীপ (Pemba Island) আদর্শ।
এখানকার সবুজ পাহাড় আর সুন্দর ডাইভিং স্থানগুলো পর্যটকদের মন জয় করে নেয়।
এখানকার সাদা বালির সমুদ্র সৈকত প্রায় জনমানবশূন্য থাকে, যা একান্তে সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত।
এখানকার স্থানীয় চাষিদের হাতে তৈরি লবঙ্গ (clove) এখানকার একটি বিশেষ আকর্ষণ।
সবশেষে, জাঞ্জিবারের (Zanzibar) কথা না বললেই নয়।
এই দ্বীপটি তার ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য বিখ্যাত।
এখানে সোয়াহিলি সংস্কৃতির পাশাপাশি আরব, পারস্য এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায়।
এখানকার স্টোন টাউন (Stone Town), যা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম, তার সরু পথ আর ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য আজও বিখ্যাত।
সুতরাং, যারা সমুদ্র ভালোবাসেন এবং একইসঙ্গে নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য তানজানিয়ার দ্বীপগুলো হতে পারে একটি অসাধারণ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক