গাজায় শিশুদের উপর নেমে আসা বিভীষিকা: “ভয়” শব্দটা যেন যথেষ্ট নয়।
গাজায় যখন বোমার শব্দে আকাশ ভারী হয়ে ওঠে, তখন সেখানকার শিশুরা এক গভীর আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটায়। সম্প্রতি, সেখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
ইসরায়েলি বিমান হামলার শিকার হয়ে বহু মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। যারা কোনোমতে বেঁচে আছে, তাদের চোখে-মুখে মৃত্যুর বিভীষিকা। তাদের এই অসহায়ত্ব ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
গত কয়েক সপ্তাহে গাজা যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। সেখানকার একটি লেখক জানিয়েছেন, তার চার বছর বয়সী এক ভাগ্নি তাকে এমন একটি প্রশ্ন করেছে, যা তিনি কোনোদিন ভুলতে পারবেন না।
মেয়েটি জানতে চেয়েছিল, “আমরা যদি ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যাই, তাহলে কি আমাদের কষ্ট হবে?”
গাজায় শিশুদের বেড়ে ওঠা যেন এক কঠিন বাস্তবতা। তারা দিনের আলো ফোটার চেয়ে বেশি দেখেছে মৃত্যুর বিভৎসতা।
সেখানকার লেখক তার ১২ জন ভাই-বোনকে নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছেন। তাদের চোখেমুখে সব সময় ভয়ের ছাপ। তাদের অভিভাবকেরা সবসময় চেষ্টা করেন শিশুদের এই ভয়াবহতা থেকে আড়াল করতে, কিন্তু বাস্তবতা এত কঠিন যে, অনেক সময় মিথ্যা বলতে হয়।
তাদের কণ্ঠস্বরে কিংবা চাহনিতে ভয়ের আভাস টের পাওয়া যায়।
গত মাসে যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। গাজা এখন যেন এক উন্মুক্ত যুদ্ধক্ষেত্র।
এখানে কারো নিরাপত্তা নেই। প্রতিদিনের গণহত্যা সেখানকার মানুষের সমস্ত আশা কেড়ে নিয়েছে। সেখানকার লেখক জানিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহে এক হাজারের বেশি নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে।
গাজা শহরের আল-নাকিল স্ট্রিটে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়েছিল, যেখানে পাঁচটি শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়। এর কয়েক দিন আগে, দার আল-আরকাম স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর উপর বোমা হামলা চালানো হয়।
সেখানে জাতিসংঘের পতাকা উড়িয়েও কোনো লাভ হয়নি, কারণ সেই হামলায় বেশিরভাগ নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩০ জন নিহত হয়।
একই দিনে ফাহদ স্কুলেও বোমা হামলা চালানো হয়, যেখানে তিনজন নিহত হয়। এর আগের দিন, জাবালিয়ায় ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত একটি ক্লিনিকে হামলা চালানো হয়, যেখানে বেসামরিক নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, চারিদিকে ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে ছিল, শিশুদের আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, এমনকি একটি শিশুর মুণ্ডু শরীর থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল।
গাজা শহরের কিছু অংশে বাসিন্দাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোথায় যাবে তারা? গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই।
উত্তরের এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলে অবিরাম বোমা হামলা চলছে, আর সমুদ্র যেন এক বিশাল কারাগার। সেখানকার রাস্তাগুলোও মৃত্যুফাঁদ।
সেখানকার লেখক জানিয়েছেন, তারা এই পরিস্থিতিতেও গাজা ছাড়েননি, কারণ তাদের যাওয়ার মতো আর কোনো জায়গা নেই। গাজার মানুষ যে পরিস্থিতির শিকার, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
সেখানকার অনুভূতিকে ভয় দিয়ে বোঝানো যায় না। সেখানকার অনুভূতি হলো এক নীরব আতঙ্ক, যা বুকের ভেতর চেপে ধরে থাকে এবং কখনো মুক্তি দেয় না।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনাগুলোকে “সংঘাত” বা “দুঃখজনক পরিস্থিতি” হিসেবে বর্ণনা করে। কিন্তু গাজায় যা ঘটছে, তা কোনো জটিলতা নয়, এটা একটি গণহত্যা।
সেখানে যা হচ্ছে, তা যুদ্ধাপরাধ। লেখক হিসেবে তিনি সবসময় লিখছেন, ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করছেন এবং বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরছেন। তিনি মনে করেন, হয়তো কেউ না কেউ শুনছে।
কারণ, তিনি মানবতার উপর বিশ্বাস রাখেন, এমনকি যখন সরকারগুলো তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। তিনি লিখেন, যেন ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকে, কেউ কিছু জানে না এমন কথা বলার সুযোগ না পায়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা