একাকী ভ্রমণের প্রবণতা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে, আর এই সুযোগে নিজের মতো করে ঘুরে আসার জন্য আদর্শ কিছু গন্তব্য চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
যারা একা ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তাদের জন্য সংস্কৃতি, ইতিহাস আর প্রকৃতির এক দারুণ মেলবন্ধন হতে পারে এই স্থানগুলো। চলুন, তেমন কয়েকটি মনোমুগ্ধকর গন্তব্যের কথা জানা যাক।
প্রথমেই আসা যাক আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের (Dublin) কথা। লেখক অস্কার ওয়াইল্ডের জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত এই শহরে রয়েছে সাহিত্য আর সংস্কৃতির এক দারুণ মিশেল।
এখানে ঐতিহাসিক শেলবোর্ন হোটেলে (The Shelbourne) থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও, পুরনো বইয়ের দোকান থেকে পছন্দের বই কিনে পাবগুলোতে বসে এক কাপ কফি অথবা বিয়ারের সঙ্গে বই পড়ার মজাই আলাদা। এখানকার ডার্ট ট্রেনে করে ডাবলিন বে-এর আশেপাশে ভ্রমণও হতে পারে দারুণ অভিজ্ঞতা।
এরপর রয়েছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রাইভেট দ্বীপ, পেтит সেন্ট ভিনসেন্ট (Petit St. Vincent)। যারা কোলাহলমুক্ত পরিবেশে অবকাশ কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি আদর্শ।
এখানে এক ও দুই কক্ষের কুটিরগুলোতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে সমুদ্রের মনোমুগ্ধকর শব্দে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো যায়। এখানকার স্পা-তে বালিনিজ-অনুপ্রাণিত চিকিৎসা এবং বিনামূল্যে স্নোরকেলিং-এর (snorkeling) সুযোগও রয়েছে। এছাড়াও, টোব্যাকো কেইস-এর মতো কাছাকাছি দ্বীপগুলোতে নৌবিহারের আনন্দ তো আছেই।
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন-এ (Copenhagen) ‘হাইগে’ (hygge) নামক ধারণার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। এটি ভালোভাবে থাকার একটি ড্যানিশ ধারণা।
কোপেনহেগেন-এর আকর্ষণীয় ডিজাইন ও স্থাপত্যশৈলী ভ্রমণকারীদের মন জয় করে। এখানে ক্যাফেতে বসে ডিজাইন ম্যাগাজিন পড়ার পাশাপাশি, স্থানীয় গ্যালারি, ওয়াইন বার এবং মৌসুমি ফ্লি মার্কেটে ঘোরাঘুরি করা যেতে পারে। এখানকার ‘হার্ট বেকারিতে’ (Hart Bakery) যাওয়া যেতে পারে, যা পুরনো একটি মেরিন-স্টাইল লাল রঙের বাড়িতে অবস্থিত।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্স (New Orleans) শহরটিও একাকী ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। কোলাহলপূর্ণ বোরবন স্ট্রিটের (Bourbon Street) বাইরেও এখানে অনেক আকর্ষণ রয়েছে।
ঐতিহাসিক ককটেল ও খাবারের জন্য পরিচিত ‘কেইন অ্যান্ড টেবল’ (Cane and Table)-এর মতো রেস্টুরেন্টগুলোতে সময় কাটানো যেতে পারে। এছাড়াও, ‘ব্ল্যাকবার্ড হোটেল’-এর (Blackbird Hotel) শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ড (New Zealand’s South Island) একটি চমৎকার গন্তব্য হতে পারে।
এখানকার উপকূলীয় প্যাসিফিক ট্রেন অথবা ট্রানজলপাইন ট্রেনে চড়ে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যেতে পারে। এখানকার স্থানীয় মাওরি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ারও সুযোগ রয়েছে।
মেক্সিকো সিটিতে (Mexico City) ভ্রমণের সময় স্থানীয় গাইডদের সঙ্গে নিয়ে শহরের বিভিন্ন আকর্ষণ ঘুরে দেখা যেতে পারে। এছাড়া, এখানে জাদুঘর ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোতেও একাকী ভ্রমণকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারেন।
সবশেষে, জাপানে (Japan) একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও দারুণ হতে পারে। কিয়োটো, টোকিও এবং ওসাকা-র মতো শহরগুলোতে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
যারা একটু ভিন্নভাবে ভ্রমণ করতে চান, তারা ওয়াক জাপানের (Walk Japan) মতো বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পাঁচ থেকে সাত দিনের জন্য ট্রেকিং বা হাইকিং-এর (trekking/hiking) পরিকল্পনা করতে পারেন।
একা ভ্রমণের ধারণাটি এখন বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। ভ্রমণের এই গন্তব্যগুলো হয়তো আমাদের অনেকের জন্যই বেশ ব্যয়বহুল।
তবে, আগে থেকে পরিকল্পনা করে, স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিলে, সীমিত বাজেটেও এইসব স্থান ঘুরে আসা সম্ভব। তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক