যুদ্ধ তীব্র হলেও ইউক্রেনে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা কমছে, এমনটাই দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণগুলোতে। যদিও রাশিয়া তাদের সৈন্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে, তবুও তাদের আঞ্চলিক লাভের গতি কমে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে গ্রীষ্মের শুরুতেই রাশিয়ার অগ্রগতি প্রায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। একই সময়ে, উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলোচনা চালানোর চেষ্টা করছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, মার্চ মাসে রাশিয়া ইউক্রেনের ১৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করতে পেরেছে। যেখানে ফেব্রুয়ারিতে তারা ১৯৪ বর্গকিলোমিটার এবং জানুয়ারিতে ৩২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছিল।
ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (Institute for the Study of War) একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করেছে। তাদের মতে, মার্চে রাশিয়ার দখলে যাওয়া জমির পরিমাণ ছিল ২০৩ বর্গকিলোমিটার, ফেব্রুয়ারিতে ৩৫৪ বর্গকিলোমিটার এবং জানুয়ারিতে ৪২৭ বর্গকিলোমিটার।
স্যাটেলাইট চিত্র এবং উন্মুক্ত সূত্র থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে এই হিসাবগুলো তৈরি করা হয়েছে, যা উভয় পক্ষের দাবির ওপর ভিত্তি করে নয়।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে দোনেৎস্ক অঞ্চলে, গত বছর রাশিয়ার অগ্রগতি ছিল খুবই ধীর। ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার-এর হিসাব অনুযায়ী, রাশিয়া সেখানে মাত্র ৪,১৬৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করতে পেরেছিল, যা ইউক্রেনের মোট এলাকার ০.৬৯ শতাংশ।
তবে, রাশিয়ার এই ধীর গতির কারণ তাদের বিশাল সৈন্য সমাবেশ সত্ত্বেও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের অভাব। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধে রাশিয়ার প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার ৭৯০ জন সৈন্য নিহত হয়েছে।
যদিও রাশিয়া সৈন্যের সংখ্যা বাড়িয়েছে, কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পারফরম্যান্স দুর্বল দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনার মাঝে রাশিয়ার আগ্রাসন আরও বেড়েছে। ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ থেকে আলোচনা শুরুর পর, রাশিয়ার ড্রোন হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
টেলিগ্রাফের একটি বিশ্লেষণ অনুসারে, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ড্রোন হামলার সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়াও, রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আক্রমণ জোরদার করেছে। বিশেষ করে খারকিভ ও সুমি অঞ্চলে নতুন ফ্রন্ট খোলার প্রস্তুতি চলছে বলে ইউক্রেনের সামরিক কমান্ডার-ইন-চিফ ওলেক্সান্ডার সিরস্কি জানিয়েছেন।
সিরস্কি আরও বলেছেন, রাশিয়া শরৎকালে বেলারুশের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ার আড়ালে আরও সেনা একত্রিত করতে পারে, যা তারা ২০২১ সালের শেষের দিকেও করেছিল।
যুদ্ধ পরিস্থিতির পাশাপাশি, কূটনৈতিক দিক থেকেও রাশিয়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দুর্বল প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন জ্বালানি অবকাঠামোতে যুদ্ধবিরতি মানছে না, যদিও কিয়েভ এই বিষয়ে কোনো চুক্তিতে আসেনি।
অন্যদিকে, ইউক্রেনীয় সেনারা রুশ ভূখণ্ডে চীনা সৈন্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, দোনেৎস্ক অঞ্চলের তারাসিভকা ও বিলোহোরিভকা এলাকায় ছয়জন চীনা সেনার সঙ্গে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের যুদ্ধ হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে, উভয় পক্ষই বেসামরিক ও জ্বালানি অবকাঠামোর উপর হামলার অভিযোগ এনেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে, যেখানে তারা বেশ কয়েকটি শহর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনও রাশিয়ার সামরিক স্থাপনা ও জ্বালানি অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে।
গত সপ্তাহে, রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে আবাসিক এলাকাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ক্রাইভি রিহ-এ একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শিশুসহ ২০ জন নিহত হওয়ার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা