ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে বহুল পরিচিত মুখ কেট অ্যাডি। বিবিসির এক সময়ের এই যুদ্ধ বিষয়ক সংবাদদাতা সম্প্রতি জানিয়েছেন, তাদের অভ্যন্তরীণ একটি তালিকায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের কণ্ঠস্বর বা ‘অ্যাকসেন্ট’-এর জনপ্রিয়তা নিয়ে মূল্যায়ন করা হতো।
সেই তালিকায় সবচেয়ে অপছন্দনীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল বার্মিংহাম অঞ্চলের ভাষাকে, যা ‘ব্রামি’ নামে পরিচিত।
সান্ডারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কেট অ্যাডির জীবন ও কর্মজীবনের উপর একটি বিশাল সংগ্রহশালা তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই তিনি এই তথ্য জানান। বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী হিসেবে তাঁর ব্যবহৃত নোটবুক, টেপ, চিঠি, ছবি ও ভিডিও ক্লিপসহ ২,৩০০-এর বেশি জিনিস এই সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে।
কেট অ্যাডি দীর্ঘদিন ধরে বিবিসির একজন নির্ভরযোগ্য সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি বিবিসি রেডিও ডারহামে কাজ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ও ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করেছেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, চীনের তিয়ানানমেন স্কয়ারে ছাত্র বিক্ষোভ, বিভিন্ন যুদ্ধ এবং ইরানের দূতাবাসে জিম্মি সংকট।
অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কেট অ্যাডি জানতে চান, বিবিসির হিসাব অনুযায়ী সবচেয়ে অপছন্দের কণ্ঠস্বর কোনটি? উত্তরে সবাই ‘বার্মিংহাম’ বলতেই ঐকমত্য প্রকাশ করেন।
এরপর তিনি জানান, সত্যিই, দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বার্মিংহামের কণ্ঠস্বরকে অনেকেই অপছন্দ করেন। এমনকি, বার্মিংহামের বাসিন্দা মাইকেল বুয়ার্ককে একবার তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় কথা না বলার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি মৃত্যুর হুমকি পেতে চাই না।”
সংবাদ অনুষ্ঠানে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার নিয়েও আলোচনা হয়। কেট অ্যাডি জানান, বিবিসি রেডিও ডারহামে কাজ করার সময় সেখানকার একজন প্রযোজক আঞ্চলিক ভাষায় খবর পড়তেন।
এর ফলে শ্রোতাদের কাছ থেকে নানা ধরনের অভিযোগ আসত। সবাই মনে করতেন, খবর পরিবেশনের জন্য এই ভাষা সঠিক নয়।
কেট অ্যাডির কর্মজীবনের শুরুতে, ১৯৮০ সালে, ইরানের দূতাবাস অবরোধের সময় তাঁর সাহসী সংবাদ পরিবেশনা তাঁকে পরিচিতি এনে দেয়।
তবে, তিনি জানান, এর পরের দিনই তাঁকে অন্য একটি সাধারণ সংবাদে যেতে হয়েছিল।
সংগ্রহশালায় কেট অ্যাডির জীবনের অনেক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, তিয়ানানমেন স্কয়ারে সংবাদ সংগ্রহের সময় তাঁর গায়ে লেগেছিল একটি গুলির সামান্য আঁচড়।
তবে, তাঁর জীবনের সবচেয়ে খারাপ মুহূর্ত ছিল বেলফাস্টে, যখন তিনি ভেবেছিলেন তাঁর মুখমন্ডলে গুলি লেগেছে এবং তিনি মারা যেতে পারেন। পরে জানা যায়, তাঁর মুখে এসে লেগেছিল একটি আলু।
সংগ্রহশালায় কেট অ্যাডির শৈশব এবং কৈশোরের নানা স্মৃতিও স্থান পেয়েছে। তাঁর খেলাধুলা এবং ন্যাশনাল ইয়ুথ থিয়েটারে অংশগ্রহণের ছবিও দেখা যায়।
সান্ডারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ডেভিড বেল জানান, কেট অ্যাডি তাঁর প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান একজন সাংবাদিক ছিলেন। তাঁর সংগ্রহকে ডিজিটাইজ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বর্তমানে কেট অ্যাডি বিবিসি রেডিও ফোর-এ ‘ফ্রম আওয়ার ওন করেসপন্ডেন্ট’ অনুষ্ঠানে কাজ করছেন। সংবাদ পরিবেশনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, তিনি চান যুক্তরাজ্যের প্রতিটি শহরে একটি ছোট রেডিও স্টেশন থাকুক, যা স্থানীয় তথ্য সরবরাহ করবে।
তাঁর মতে, লন্ডন ছাড়া দেশের অন্য সব অঞ্চলের সংবাদ পরিবেশনায় দুর্বলতা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান