ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি কি অর্থনৈতিক জনপ্রিয়তাবাদকে দুর্বল করে দিল?
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং বিশ্ব অর্থনীতির উপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব নিয়ে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে চলছে আলোচনা। অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এই নীতি বিশ্বায়নের ধারণাকে দুর্বল করে দিয়েছে, আবার কেউ কেউ একে অর্থনৈতিক জনপ্রিয়তাবাদের পতনের কারণ হিসেবে দেখছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া বাণিজ্য শুল্কের সিদ্ধান্তগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। বিশেষ করে চীন সহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর তিনি যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তার ফলস্বরূপ বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ম-কানুনকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য ছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ককে নতুনভাবে সাজানো। তবে, এর ফলস্বরূপ বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি পায়, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরূপ ছিল। বিশ্বায়নের মূল ভিত্তি হল পারস্পরিক বিশ্বাস, সুনির্দিষ্ট নিয়ম এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কিন্তু ট্রাম্পের নীতির কারণে এই ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কঠিন হয়ে পড়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ইয়াল বাজেট ল্যাব-এর তথ্য অনুযায়ী, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠা শুল্কের হার ১৯০৩ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা প্রায় ২৭ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization – WTO) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির সমালোচকরা বলছেন, এর ফলে একদিকে যেমন বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি আমেরিকার অর্থনীতিও দুর্বল হয়েছে। কারণ, শুল্কের কারণে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে, যা আমেরিকান ভোক্তাদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।
তাছাড়া, এর ফলে আমেরিকার উৎপাদকরা আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য বিক্রি করতে সমস্যায় পড়ছেন।
অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, ট্রাম্পের এই নীতি বিশ্বায়নের দুর্বল দিকগুলো সামনে এনেছে। তারা মনে করেন, বিশ্বায়নের ফলে কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শ্রমিকরা তাদের কর্মসংস্থান হারিয়েছেন।
এই কারণে, অনেক দেশে অর্থনৈতিক জনপ্রিয়তাবাদের উত্থান হয়েছে, যা বাণিজ্য সুরক্ষার পক্ষে কথা বলে।
তবে, এই ধরনের নীতির বিপদ সম্পর্কেও অনেকে সতর্ক করেছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাণিজ্য সুরক্ষার নামে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমে যেতে পারে, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের কিছু বাণিজ্য নীতি বহাল রেখেছে, বিশেষ করে চীনের বিরুদ্ধে নেওয়া শুল্কগুলো। যদিও অনেকে মনে করেন, এই ধরনের নীতি দীর্ঘমেয়াদে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।
বর্তমানে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাণিজ্য ঘাটতি এবং ভর্তুকি কমাতে নতুন জোট গঠনের চেষ্টা করছে।
তবে, এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, অর্থনৈতিক জনপ্রিয়তাবাদের পরিবর্তে মুক্ত বাণিজ্যের নীতিকে সমর্থন করা।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্যের উপর আমাদের দেশের অর্থনীতি অনেকখানি নির্ভরশীল।
বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি পেলে আমাদের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়তে পারে। তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো আমাদের দেশের অর্থনীতিকে কিভাবে প্রভাবিত করবে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে।
(লক্ষ্য করুন: এই নিবন্ধে ব্যবহৃত শব্দগুলি এবং ধারণাগুলি একটি পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।)
তথ্য সূত্র: The Guardian