ওমানের মাটিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু বিষয়ক আলোচনা শুরু হয়েছে। উভয় দেশের প্রতিনিধি দল এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন, যেখানে তেহরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যদিও আলোচনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
জানা গেছে, ওমানের রাজধানী মাস্কাটে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে ইরানের পক্ষ থেকে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন।
এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি (জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন বা জেসিপিওএ) পুনরুজ্জীবিত করা।
২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। এরপর থেকে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
বৈঠকে ইরানের পক্ষ থেকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পর্কিত উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই তারা তাদের পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চায়।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করতে এবং তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়াতে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আলোচনা উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
তবে, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর অবিশ্বাস এবং মতপার্থক্যের কারণে আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়া কঠিন হতে পারে।
ইরানের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে যে, তারা তাদের দাবি থেকে এক চুলও সরবে না। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে।
এই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা এবং কতগুলো সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত বিষয়গুলো।
এছাড়া, তেহরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রত্যাহার করা হবে কিনা, সেই বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
ওমান দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তারা অতীতেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এবারও তারা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা আয়োজনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। ওমানের এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আলোচনার সাফল্য নির্ভর করছে উভয়পক্ষের নমনীয়তার ওপর।
উভয় দেশ যদি তাদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসে, তবে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব।
এই আলোচনার ফলাফল কেবল ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই নয়, বরং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোও এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আগ্রহী।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা