বিখ্যাত ঔপন্যাসিক কেটি কিতামুরা: লেখার গুরুত্ব আজও অপরিসীম।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঔপন্যাসিক কেটি কিতামুরার নতুন উপন্যাস ‘অডিশন’(Audition)। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর লেখালেখি, পারিবারিক জীবন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে লেখার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছেন। একজন লেখকের মনোজগতে প্রবেশ করে, তাঁর ভাবনাগুলো জানতে পারা সবসময়ই আগ্রহের বিষয়।
জাপানি বংশোদ্ভূত কিতামুরার বেড়ে ওঠা ক্যালিফোর্নিয়ায়। তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অডিশন’-এর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে এক অভিনেত্রী ও এক কলেজ ছাত্রকে ঘিরে। যেখানে মা ও ছেলের সম্পর্কের জটিলতা, আত্মপরিচয় এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে।
উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে কিতামুরা মূলত মাতৃত্ব, সম্পর্কের টানাপোড়েন, এবং মানুষের নিজস্ব সত্তার গভীরে ডুব দিতে চেয়েছেন। তাঁর মতে, এই উপন্যাসে মানুষের ভেতরের নীরবতা, দ্বিধা এবং সম্পর্কের অদৃশ্য সুতো—এগুলোই প্রধান বিষয়। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে, যখন বহু কিছুই কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে, তখন লেখাই যেন প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার।
কেটি কিতামুরা মনে করেন, লেখকেরা ভাষার ওপর হওয়া আঘাতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন। তাঁর মতে, লেখকেরা মানুষের মনকে নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যান। বই পড়ার মাধ্যমে অন্য মানুষের চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়।
লেখিকা হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার আগে, কিতামুরার স্বপ্ন ছিল ব্যালে নৃত্যশিল্পী হওয়ার। নাচের জগৎ থেকে ধীরে ধীরে তিনি লেখালিখির দিকে ঝুঁকে পড়েন। তাঁর মতে, নাচ এবং লেখা—দুটোই এক ধরনের শৃঙ্খলা ও অধ্যবসায়ের দাবি রাখে।
কেটি কিতামুরার স্বামীও একজন লেখক, নাম হারি কুনজুরু। কিতামুরার মতে, তাঁর স্বামী দ্রুত লেখেন। তাঁদের মধ্যে কাজের ক্ষেত্রে কোনো ঈর্ষা নেই, বরং একে অপরের লেখা নিয়ে আলোচনা করেন এবং সম্পাদনা করেন।
পারিবারিক জীবন এবং কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখা নিয়ে কিতামুরা বলেন, “জীবনের জটিলতা থেকেই কাজের জন্ম হয়। আমি আমার জীবনের মাঝখান থেকেই লিখি, কারণ আমার হাতে বেশি সময় নেই।”
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কমে যাওয়ার প্রসঙ্গে কিতামুরা লেখাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে দেখেন। তাঁর মতে, লেখাই মানুষকে একত্রিত করে এবং ভিন্নভাবে বাঁচতে শেখায়।
কেটি কিতামুরার ‘অডিশন’ বইটি বর্তমানে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেছে। তাঁর লেখার এই জগৎ, চিন্তাভাবনা, এবং বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে লেখার প্রয়োজনীয়তা—এসব বিষয় পাঠককে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান