গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এই তথ্য জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা গাজার পরিস্থিতিকে ‘ধ্বংসস্তূপের পরের’ পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন।
শনিবারও গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশুও ছিল। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় বোমা হামলা চালানো শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
শনিবারের হামলায় গাজার তুফাহ্ এলাকায় ২ জন নিহত এবং ২ শিশু আহত হয়েছে। এছাড়াও, উত্তর গাজার আল-আতা areaরা জেলায় আরও ২ জন নিহত হয়েছে।
খান ইউনিসের দক্ষিণে ক্বিজান আন-নাজ্জার এলাকায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন আরও একজন ফিলিস্তিনি। খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য তৈরি তাঁবুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। যদিও ইসরায়েল এই এলাকাকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
আল-আহলি হাসপাতালের বাইরে থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি জানিয়েছেন, ‘শাম’ নামের এক নবজাতক গুরুতর আহত হয়েছে। শিশুটির পরিবারের উপর হামলা চালানো হলে এই ঘটনা ঘটে।
হিন্দ খৌদারি বলেন, ‘শিশুটির একটি হাত কেটে ফেলতে হয়েছে এবং কয়েক ঘণ্টা পর সে মারা যায়। কারণ তার আঘাত ছিল গুরুতর এবং চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি।’
এছাড়াও, শনিবার শুজাইয়া এবং খান ইউনিসে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হিন্দ খৌদারি আরও জানান, ‘ফিলিস্তিনিরা জানে না তারা কোথায় যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আল-আকসা হাসপাতালে আছি এবং প্রতিদিন অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেখি। যাদের উপর হামলা হচ্ছে, আহত হচ্ছে অথবা নিহত হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে, ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের অবস্থা খুবই খারাপ হচ্ছে।’
জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি শুক্রবার জানান, ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলিদের চালানো ২২৪টি হামলার মধ্যে ৩৬টিতে নিহতদের মধ্যে ছিলেন শুধু নারী ও শিশু।
ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংস্থা আল-হাক এক বিবৃতিতে বলেছে, জাতিসংঘের এই পর্যবেক্ষণে তাদের আগের চিহ্নিত করা একটি চিত্রই ফুটে উঠেছে। আল-হাক এক বিবৃতিতে আরও বলেছে, ‘আধুনিক কোনো সংঘাতে নারী, ছেলে, মেয়ে এমনকি শিশুদের নির্মূল করার এমন পরিকল্পিত প্রচেষ্টা দেখা যায়নি।’
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরওয়া)-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি আল-জাজিরার ‘আপফ্রন্ট’ অনুষ্ঠানে গাজার পরিস্থিতিকে ‘ধ্বংসস্তূপের পরের’ পরিস্থিতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তুরস্কের আন্তালিয়া ডিপ্লোম্যাসি ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় লাজারিনি আরও বলেন, ইসরায়েল খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি মানবিক সহায়তা সামগ্রী গাজায় প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
শনিবার এক টুইট বার্তায় ইউএনআরওয়া-এর যোগাযোগ পরিচালক জুলিওত তৌমা সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় ‘সব ধরনের মৌলিক সরবরাহ ফুরিয়ে যাচ্ছে’। তিনি আরও বলেন, ‘এর মানে হল, শিশুরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যাচ্ছে।’
ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলে নতুন এলাকা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে এবং জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে।
ইউএনআরওয়া জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনি গাজা ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। অধিকার সংস্থাগুলোর নিন্দা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১৫,৯৮১ জন আহত হয়েছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা