মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি শান্ত শহর, মেরিয়ন। যারা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
অ্যাপালাচিয়ান ট্রেইল (Appalachian Trail), আমেরিকার অন্যতম বিখ্যাত একটি দীর্ঘ পথের হাইকিং ট্রেইল, এই শহরের খুব কাছেই অবস্থিত। যদিও মেরিয়ন শহরটি সরাসরি অ্যাপালাচিয়ান ট্রেইলের অংশ নয়, তবুও ট্রেকারদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্রামস্থল।
শুধু তাই নয়, যারা হাইকিং করতে ভালোবাসেন না, তাদের জন্যও মেরিয়ন শহরের আকর্ষণ কম নয়।
মেরিয়নের আশেপাশে রয়েছে চমৎকার কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা ভ্রমণকারীদের মন জয় করে নেয়।
এখানকার মাউন্ট রজার্স এবং গ্রেসন হাইল্যান্ডস স্টেট পার্ক-এর মতো স্থানগুলো হাইকিং এবং প্রকৃতির অনবদ্য সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত। গ্রেসন হাইল্যান্ডস স্টেট পার্কে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট ঘোড়া (Ponies) পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয়।
এছাড়াও, যারা গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য রয়েছে ‘ব্যাক অফ দ্য ড্রাগন’ নামক একটি সুন্দর রাস্তা। এই পথে প্রায় ৩০ মাইলের মধ্যে ৩০০টির বেশি বাঁক রয়েছে, যা রাইডারদের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা।
ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দিক থেকেও মেরিয়ন বেশ সমৃদ্ধ।
এখানকার ‘ওয়েইন সি. হেন্ডারসন স্কুল অফ অ্যাপালাচিয়ান আর্টস’ (Wayne C. Henderson School of Appalachian Arts) -এ গেলে আপনি স্থানীয় শিল্পকলা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং চাইলে বাদ্যযন্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণও নিতে পারেন। এখানকার স্থানীয় শিল্পীদের সাথে মাঝে মাঝে গানের আসর বসে, যা দর্শকদের আনন্দ দেয়।
মেরিয়নের কাছেই অবস্থিত সল্টভিলে (Saltville)। এখানে ‘মিউজিয়াম অফ দ্য মিডল অ্যাপালাচিয়ানস’-এ (Museum of the Middle Appalachians) গেলে এই অঞ্চলের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। বিশেষ করে এখানকার উলী ম্যামথের (Woolly Mammoth) জীবাশ্মগুলি দর্শকদের আকর্ষণ করে।
মেরিয়নের খাবারের দোকানগুলোও বেশ জনপ্রিয়।
‘ডিপ ডগ’ (Dip Dog) এখানকার একটি পুরনো রেস্টুরেন্ট, যেখানে বিশেষ ধরনের হটডগ পাওয়া যায়। এছাড়া, ‘সিস্টার্স ক্যাফে অ্যান্ড গিফটস’ (Sisters Cafe & Gifts)-এ সকালের কফি থেকে শুরু করে রাতের খাবার—সব কিছুই উপভোগ করা যায়। এখানে স্থানীয় জিনিসপত্রও কিনতে পাওয়া যায়।
‘সার ৮১’ (Sur 81)-এ সাউদার্ন এবং মেক্সিকান খাবারের একটি মিশ্রণ পাওয়া যায়, যা ভোজনরসিকদের জন্য দারুণ। রাতের বেলা আপনি ‘হাইল্যান্ডস ডিস্টিলিং কোম্পানি’তে (Highlands Distilling Company) যেতে পারেন, যেখানে ঐতিহ্যবাহী উপায়ে তৈরি করা মদ ও হুইস্কি পাওয়া যায়।
মেরিয়নে কেনাকাটার জন্য কিছু দারুণ জায়গা আছে।
যারা হাইকিংয়ের সরঞ্জাম কিনতে চান, তারা মেরিয়ন আউটডোরস-এ (Marion Outdoors) যেতে পারেন। এছাড়া, পুরনো পোশাক ও অ্যাক্সেসরিজের জন্য ‘ডাউনটাউন রিসেল বুটিক’ (Downtown Resale Boutique) এবং আর্ট গ্যালারি হিসেবে ‘দ্য ফোর্ড স্টুডিওস’ (The Ford Studios) ঘুরে দেখতে পারেন।
এই শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের জায়গা রয়েছে।
হাইকারদের জন্য ‘মেরি ইন’ (Merry Inn) একটি ভালো বিকল্প, যেখানে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আরামদায়ক ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, ‘হাংরি মাদার স্টেট পার্ক’-এ (Hungry Mother State Park) কটেজ ও ক্যাম্পিং-এর সুযোগ আছে। ঐতিহাসিক পরিবেশে থাকতে চাইলে ‘জেনারেল ফ্রান্সিস মেরিয়ন হোটেল’ (General Francis Marion Hotel) আপনার জন্য সেরা।
সবুজ পাহাড় আর ঐতিহাসিক স্থাপত্যের মেলবন্ধন মেরিয়নকে করেছে এক আকর্ষণীয় স্থান। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন এবং একই সাথে শহরের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য মেরিয়ন হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য।
তাই, পরবর্তী ভ্রমণে ভার্জিনিয়ার এই সুন্দর শহরটিকে বিবেচনা করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure