ওসাকা, জাপান – যুদ্ধ-বিগ্রহ আর বাণিজ্য যুদ্ধের এই অস্থির বিশ্বে, বিশ্বকে একত্রিত করার বার্তা নিয়ে জাপানে শুরু হলো ওসাকা এক্সপো ২০২৫। শনিবার এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিংগুরু ইশিবা বিশ্ববাসীর প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা বিশ্ব এখন বিভিন্ন বিভাজনের শিকার। এমন পরিস্থিতিতে, সারা বিশ্ব থেকে মানুষজন এখানে এসে জীবন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, বিচিত্র ধারণা এবং সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করবে—এটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।”
‘জীবন, বিশ্ব এবং ভবিষ্যৎ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ওসাকা এক্সপো ২০২৫ রবিবার (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। জাপানের আশা, এই প্রদর্শনী ভবিষ্যতের সমাজকে তুলে ধরবে এবং বিশ্বকে একতাবদ্ধ করতে সহায়তা করবে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের কারণে বিশ্বজুড়ে যে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা কিছুটা হলেও এই উৎসবের আনন্দকে ম্লান করে দিয়েছে।
ঐক্যের প্রতীক হিসেবে প্রদর্শনী প্রাঙ্গণে তৈরি করা হয়েছে কাঠের বিশাল কাঠামো, যা ‘গ্র্যান্ড রিং’ নামে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, “আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, এই রিংয়ের ভেতরে এবং বাইরের দেশ ও দর্শনার্থীদের পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্ব আবার একত্রিত হবে।”
বিশ্বের বৃহত্তম কাঠের এই স্থাপত্য কাঠামোটি ২০ মিটার উঁচু এবং এর পরিধি ২ কিলোমিটার। এর নির্মাণ ব্যয় হয়েছে অনেক।
ওসাকা উপসাগরের একটি পুনরুদ্ধার করা দ্বীপ এবং শিল্প বর্জ্য ফেলার স্থান ইউমেসিমায় (যার অর্থ স্বপ্নের দ্বীপ) এই ছয় মাসব্যাপী প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় ১৮০টি দেশ, অঞ্চল ও সংস্থা তাদের ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ও ধারণাগুলো প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত। প্রায় ৮০টি বিশেষ নকশার প্যাভিলিয়নে এগুলো উপস্থাপন করা হবে।
এর আগে, ১৯৭০ সালেও ওসাকায় একটি বিশ্ব প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল। সেবার ৬ কোটি ৪০ লক্ষ দর্শক এসেছিল, যা ২০১০ সাল পর্যন্ত একটি রেকর্ড ছিল।
এবার অবশ্য জনসাধারণের আগ্রহ কমে গেছে। দুর্বল ইয়েনের কারণে নির্মাণ খরচও বেড়ে যাওয়ায় অনেক সমালোচনা হচ্ছে। শুরুতে এই প্রদর্শনীর জন্য খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ২৩৫ বিলিয়ন ইয়েন (যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১.৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। এই খরচের প্রায় ১৪ শতাংশ ব্যয় হয়েছে গ্র্যান্ড রিং তৈরিতে। নেপাল ও ভারতের মতো কয়েকটি দেশের প্যাভিলিয়ন এখনো প্রস্তুত হয়নি। ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের প্রস্তুতিতেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়া এই প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে না।
টিকিট বিক্রিও কিছুটা ধীর গতিতে হচ্ছে। আয়োজকদের ১৪ মিলিয়ন টিকিট বিক্রির লক্ষ্য থাকলেও, এখন পর্যন্ত মাত্র ৯ মিলিয়ন টিকিট বিক্রি হয়েছে। আগামী ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত চলা এই প্রদর্শনীতে ২ কোটি ৮০ লক্ষের বেশি দর্শক সমাগমের আশা করছেন আয়োজকরা।
শনিবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্রাট নারুহিতোও উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, ১০ বছর বয়সে আগের প্রদর্শনীতে আসাটা তার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।
সম্রাট নারুহিতো বলেন, “সে সময়কার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, বেতার ফোন এবং অ্যাপোলো ১২ মিশনের মাধ্যমে আনা চাঁদের পাথর দেখে আমি খুব উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। আমি আশা করি, এবারের ওসাকা এক্সপোও সফল হবে এবং শিশুরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রযুক্তি ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য করা প্রচেষ্টা সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারবে।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস