জন লেনন ও ইয়োকো ওনোর জীবনের একটি বিশেষ সময় নিয়ে নির্মিত হয়েছে নতুন তথ্যচিত্র ‘ওয়ান টু ওয়ান: জন অ্যান্ড ইয়োকো’। চলচ্চিত্রটি তাদের নিউইয়র্কে বসবাসের প্রথম ১৮ মাসের (১৯৭১-১৯৭২) অজানা কিছু দিক উন্মোচন করেছে, যা দর্শকদের কাছে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসবে।
ষাটের দশকের শেষ এবং সত্তরের দশকের শুরুতে, জন লেনন ও ইয়োকো ওনো যখন নিউইয়র্কে পা রাখেন, তখন আমেরিকার রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে চলছিল নানা পরিবর্তন।
তাদের গ্রিনউইচ ভিলেজের বাড়িতে ভিড় করতেন শিল্পী, বুদ্ধিজীবী এবং সমাজকর্মীরা। এই সময়টা ছিল বিটলস থেকে বেরিয়ে আসার পর লেননের জন্য নতুন যাত্রা শুরুর সময়।
অন্যদিকে যেমন তিনি নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছিলেন, তেমনই ১৯৬০-এর দশকের আদর্শ এবং আশাগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত করা যায়, সেই বিষয়েও দ্বিধায় ছিলেন।
তথ্যচিত্রটি তৈরি হয়েছে মূলত দুটি প্রধান উপাদানের উপর ভিত্তি করে।
প্রথমটি হলো, ১৯৭২ সালের ৩০শে আগস্ট ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত উইলব্রুক স্টেট স্কুলের জন্য আয়োজিত জন লেনন ও ইয়োকো ওনোর কনসার্টের দৃশ্য।
এই কনসার্টের দৃশ্যগুলো পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং লেননের ছেলে শন ওনোর তত্ত্বাবধানে শব্দ সম্পাদনা করা হয়েছে।
এর ফলে, দর্শকরা বড় পর্দায় সেই সময়ের কনসার্টের একটি জীবন্ত চিত্র দেখতে পাবেন।
লেননের ‘ইনস্ট্যান্ট কার্মা’ এবং ‘কাম টুগেদার’-এর মতো গানগুলো এই কনসার্টে পরিবেশিত হয়েছিল।
এছাড়াও, তথ্যচিত্রে রয়েছে লেনন ও ওনোর কথোপকথনের টেপ।
এই টেপগুলো তৈরি করা হয়েছিল মূলত এফবিআইয়ের (FBI) নজরদারি এড়ানোর জন্য।
অন্তরঙ্গ কথোপকথনগুলোতে তাদের বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা শোনা যায়।
বিশেষ করে, ইয়োকো ওনোর মেয়ে কিয়োকোকে খুঁজে বের করার জন্য তাঁর আকুলতা এবং সেই সময়ের মানসিক অবস্থা ফুটে উঠেছে।
কিয়োকোকে তার প্রাক্তন স্বামী টনি কক্স অপহরণ করেছিলেন।
এই তথ্যচিত্রে আমেরিকার সেই সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতাও তুলে ধরা হয়েছে।
জর্জ ম্যাকগভার্নের মতো উদারপন্থী প্রার্থীর পরাজয়, রিচার্ড নিক্সন প্রশাসনের দুর্নীতি এবং লেনন ও ওনোর দেশত্যাগের চেষ্টা— সবই এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
একইসাথে, ইয়োকো ওনোর ব্যক্তিগত সংগ্রামও দর্শকদের নাড়া দেবে।
তথ্যচিত্রটির পরিচালক কেভিন ম্যাকডোনাল্ডের মতে, এই ছবিতে ইয়োকো ওনোর অন্যরকম একটি দিক তুলে ধরা হয়েছে।
ইয়োকোকে এখানে একজন ব্যথিত মা হিসেবে দেখা যায়, যিনি তাঁর মেয়ের জন্য আকুল।
ম্যাকডোনাল্ড আরও জানান, তিনি চেয়েছিলেন দর্শক ইয়োকোকে ভালোভাবে জানুক।
তথ্যচিত্রটি মূলত নতুন করে শুরু করার আশা এবং ভয়কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে।
জন লেনন ও ইয়োকো ওনো তাঁদের রাজনৈতিক ধারণা থেকে সরে এসে ব্যক্তিগত পর্যায়ে পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন।
উইলব্রুকের শিশুদের জন্য কনসার্ট করা ছিল তাঁদের তেমনই একটি প্রয়াস।
তথ্যচিত্রে জন লেননের একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে, “ফ্লাওয়ার পাওয়ার যদি কাজ না করে, তবে কী? আমরা আবার শুরু করব।”
এই তথ্যচিত্রটি শুধু লেনন ও ওনোর জীবন নিয়েই নয়, বরং আশাহীনতার মাঝেও কীভাবে নতুন করে পথ খুঁজে বের করা যায়, সেই বার্তাও বহন করে।
তথ্য সূত্র: পিপল