শিরোনাম: শিল্পী ডু হো সু: স্মৃতি আর বাস্তবের বুননে ঘর
দক্ষিণ কোরীয় শিল্পী ডু হো সু, যিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে ‘ঘর’-এর ধারণাটিকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
তাঁর কাজগুলি স্মৃতি, উদ্বাস্তু জীবন, এবং পরিচয়ের মতো গভীর বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করে। এই শিল্পী তাঁর শৈল্পিক নির্মাণে ব্যবহার করেন স্বচ্ছ নাইলন জাল, যা তাঁর তৈরি স্থাপত্য কাঠামোকে এক ভিন্ন মাত্রা দেয়।
সম্প্রতি, লন্ডনের টেট মডার্নে তাঁর কাজের প্রদর্শনী ‘ওয়াক দ্য হাউস’ দর্শকদের মন ছুঁয়ে গেছে।
১৯৭০-এর দশকে সিউলে থাকাকালীন, ডু হো সুর বাবা তাঁদের পরিবারের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান ‘হানোক’ ঘর তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন। এই ‘হানোক’ ছিল কাঠের তৈরি, বাঁকানো টালিযুক্ত ছাদযুক্ত একটি কোরিয়ান ঘর।
বাবার এই সিদ্ধান্ত ডু হোর শৈশবকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। শিল্পী জানান, তাঁর বাবা ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী, যিনি কোরিয়ান শিল্পকে আধুনিকতার দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। একই সময়ে, তিনি চেয়েছিলেন ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান সংস্কৃতি ও মূল্যবোধগুলি রক্ষা করতে, যা দ্রুত পরিবর্তনের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছিল।
ডু হো সু-এর শিল্পকর্ম মূলত সেইসব বাসস্থানগুলির পুনর্গঠন, যেখানে তিনি বিভিন্ন সময়ে বসবাস করেছেন।
তিনি স্মৃতি থেকে উঠে আসা বিভিন্ন ঘর তৈরি করেন, যা দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে। তাঁর কাজে ব্যবহৃত হয় স্বচ্ছ কাপড়, যা ঘরগুলির অস্তিত্বকে আরও মায়াবী করে তোলে।
দরজা, লাইট সুইচ এমনকি স্ক্রু এবং পেরেক-এর সূক্ষ্ম চিহ্নগুলোও তিনি ফুটিয়ে তোলেন, যা ঘরগুলির স্মৃতিচিহ্ন বহন করে।
শিল্পীর মতে, স্মৃতি তাঁর কাজের কেন্দ্রবিন্দু।
“আমরা যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাই, তখন আমাদের স্মৃতিগুলি সাথে নিয়ে যাই। আমি আমার তৈরি স্থাপত্য কাঠামোতে আমার স্মৃতিগুলি স্থাপন করি,” তিনি বলেন। এই কাঠামো শুধু ভৌত কাঠামো নয়, বরং মানসিক এবং রূপক অর্থেও গুরুত্বপূর্ণ।
এই স্বচ্ছ কাপড়ের ধারণা এসেছিল স্মৃতিকে ধারণ করার একটি উপায় খুঁজে বের করার সময়। উপাদানটি যেমন আমাদের স্মৃতির মতো ভঙ্গুর, তেমনই অতীতে ফিরে যাওয়ার অনুভূতিও এতে বিদ্যমান।
ডু হো সু-এর কাজগুলি বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘সাম/ওয়ান’, ‘হু অ্যাম উই?’, ‘পাবলিক ফিগারস’, ‘ফ্লোর’, ‘নেস্ট/স’ এবং ‘পারফেক্ট হোম’। ‘ওয়াক দ্য হাউস’ প্রদর্শনীতে শিল্পী তাঁর পুরোনো এবং নতুন কাজের মাধ্যমে দর্শকদের স্মৃতি এবং বাস্তবের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে উৎসাহিত করেন।
প্রদর্শনীটির মূল ধারণা হলো, স্থান পরিবর্তন করার সময় যেন ঘরটিকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া।
ডু হো সু-এর জন্ম দক্ষিণ কোরিয়ায়, ১৯৬০-এর দশকে। তিনি ১৯৯১ সালে কোরিয়া ত্যাগ করেন এবং বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন।
তাঁর শিল্পী জীবনের শুরুটা ছিল চিত্রকর্মের মাধ্যমে, তবে পরবর্তীতে তিনি ভাস্কর্যের দিকে ঝুঁকে পড়েন। উদ্বাস্তু জীবনের অনুভূতি, যা তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে উঠে এসেছে, তাঁর কাজে গভীর প্রভাব ফেলে।
শিল্পী মনে করেন, ঘর-এর ধারণা তাঁর মধ্যে তৈরি হয়েছিল কোরিয়া ত্যাগের পর।
ডু হো সু-এর কাজগুলি শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং এটি একটি যাত্রা, যা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ঘর ও স্মৃতির গুরুত্বকে তুলে ধরে। টেট মডার্নের এই প্রদর্শনীতে, দর্শকরা শিল্পীর কাজের মাধ্যমে নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian