মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারের ওভাল অফিসে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিতির পর তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। ২০২৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে হোয়াইট হাউসের দৌড়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে এমন একজন হিসেবে পরিচিত হুইটমার, ট্রাম্পের সঙ্গে ছবি তোলার সময় নিজের মুখ ঢাকার কারণে বেশি সমালোচিত হচ্ছেন।
জানা গেছে, মিশিগানের বরফঝড়, রাজ্যের প্রতিরক্ষা সম্পদ এবং শুল্কসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য একটি দ্বিদলীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বুধবার রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। বৈঠকের পর হুইটমারকে ওভাল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার সময় তিনি “বিষণ্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন”, এমনটাই জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
হুইটমারের মুখপাত্র সিএনএনকে বলেছেন, গভর্নর ওই মিডিয়া উপস্থিতিতে কিছুটা হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। মুখপাত্র আরও বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে কোনো ধারণা না দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রেস কনফারেন্সে তাকে ওভাল অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে নেওয়া পদক্ষেপ বা দেওয়া বক্তব্যের প্রতি তার সমর্থন নেই।”
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুইটমারের প্রশংসা করার পরেই তার প্রশাসন এই প্রেস কনফারেন্স থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ট্রাম্প বলেছিলেন, “মিশিগান থেকে আসা গ্রেচেন হুইটমারকে পেয়ে আমরা সম্মানিত। তিনি চমৎকার কাজ করেছেন, খুবই ভালো মানুষ।”
উল্লেখযোগ্য যে, পাঁচ বছর আগে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় গভর্নরের সম্পর্কে ট্রাম্পের দেওয়া মন্তব্য থেকে এই মন্তব্যে ভিন্নতা দেখা যায়। তখন ট্রাম্প মিশিগানের “তরুণ, নারী গভর্নর”-এর ব্যাপারে “বড় সমস্যা” রয়েছে বলে মন্তব্য করেছিলেন এবং যোগ করেছিলেন, “তিনি শুধু বসে থেকে ফেডারেল সরকারকে দোষারোপ করেন।”
অন্যদিকে, হুইটমার ট্রাম্পকে তার বিরুদ্ধে হওয়া একটি অপহরণ চেষ্টার জন্য দায়ী করেন, যেটি ডানপন্থী চরমপন্থীরা তৈরি করেছিল এবং যার ফলস্বরূপ নয়জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
বুধবারের প্রেস কনফারেন্সের পর মিশিগানের একটি কলেজ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় হুইটমার বলেন, “আমি এখানে থাকতে চাইনি বা আসার পরিকল্পনাও করিনি। আমি অনেক কিছুর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি যা বলা হয়েছে এবং যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি সেখানে ছিলাম, কারণ আমাকে মিশিগানের জন্য বিষয়টি তুলে ধরতে হতো এবং সেটাই আমার কাজ।”
তবে, বিশেষ করে অনলাইনে, হুইটমারের সমালোচনা করা হচ্ছে। এমনকি, ছবি তোলার সময় তার মুখ ঢাকার বিষয়টিও সমালোচিত হয়েছে। একজন ব্যবহারকারী এক্স-এ লিখেছেন, “তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন, যখন তিনি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করছিলেন। ডেমোক্র্যাটরা, কেউ আপনাকে বাঁচাতে আসছে না।” আরেকজন বলেছেন, “এ ধরনের ঘটনার একটি প্রিয় দিক হলো, ছবি তুললে তার ভালো হতো। হোয়াইট হাউসে ‘স্বাভাবিক’ গ্রেচেন হুইটমার-এর চেয়ে ‘লুকানো’ গ্রেচেন হুইটমার অনেক বেশি বিব্রতকর।”
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ক্ষেত্র হলো মিশিগান। ডেমোক্রেটিক দলের ভোটাররা ক্রমবর্ধমানভাবে তাদের দলের সদস্যদের ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য সমালোচনা করছেন। হুইটমার প্রকাশ্যে বলেছেন যে, তিনি নিজেকে “বিরোধী দলের নেতা” হিসেবে মনে করেন না।
জানুয়ারিতে তিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছিলেন, “আমি কিছু সহকর্মীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, যারা খুব ‘ব্লু স্টেট’-এর (যেখানে ডেমোক্রেটদের প্রভাব বেশি) অন্তর্ভুক্ত। তাদের থেকে মিশিগানের পরিস্থিতি খুবই আলাদা। এখানে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এমন একটি হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস রয়েছে, যাদের সঙ্গে আমাকে কাজ করতে হবে। ফেডারেল সরকারের সঙ্গে কাজ করার সময় আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, আমি কিছু বিষয় ডেলিভার করতে পারি। তাই আমি নিজেকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দেখি না, যেমনটা অনেকে মনে করেন।”
রাজনৈতিক পরামর্শক সংস্থা গ্রাসরুটস মিডওয়েস্টের প্রধান নির্বাহী অ্যাড্রিয়ান হেমন্ড সম্প্রতি বলেছেন, “ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় ফিরে আসেন, তখন থেকেই তিনি তার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছেন, যা উপযুক্ত। তিনি একটি ‘সুইং স্টেট’-এর গভর্নর।”
এদিকে, মিশিগানের ওকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড ডুলি বলেছেন, “এটি ডেমোক্রেটিক পার্টির অবস্থার প্রতিফলন। একজন জনপ্রিয় মধ্য-পশ্চিমের গভর্নর ওয়াশিংটনে গিয়ে দ্বিদলীয় ইস্যুতে কিছু জয় পান এবং এর জন্য নিজের দলের লোকদের দ্বারা আক্রান্ত হন।”
২০১৮ সালে প্রথম মিশিগানের গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হন হুইটমার এবং ২০২২ সালে আগের চেয়ে বেশি ভোটে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান