সার্ডিনিয়া: ইতালির এক অনবদ্য গন্তব্য
ভূমধ্যসাগরের বুকে অবস্থিত সার্ডিনিয়া, প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি। এখানকার পাথুরে সৈকত, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, এবং মনোরম দৃশ্য যেকোনো ভ্রমণকারীর মন জয় করে।
যদি আপনি ইতালি ভ্রমণে আগ্রহী হন, তবে সার্ডিনিয়ার গ্যালুরা অঞ্চল আপনার জন্য একটি আদর্শ স্থান হতে পারে। আসুন, এই অঞ্চলের কিছু আকর্ষণীয় দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
গ্যালুরার আকর্ষণ
গ্যালুরা অঞ্চলটি সাদা বালুকাময় সৈকত এবং স্বচ্ছ নীল জলের জন্য সুপরিচিত, তবে এর বাইরেও এখানে অনেক কিছু উপভোগ করার আছে। এখানকার পাথুরে ভূমি, সবুজ বনভূমি, এবং আঙুর ক্ষেত পর্যটকদের জন্য এক চমৎকার অভিজ্ঞতা।
গ্যালুরার নামকরণ করা হয়েছে স্থানীয় উপভাষা ‘গাদদুরা’ থেকে, যার অর্থ ‘পাথুরে এলাকা’। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য গ্রানাইট পাথরের দ্বারা গঠিত, যা বিশাল বোল্ডার থেকে শুরু করে প্রাচীন যুগের ‘নুরারি’ টাওয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত।
ভ্রমণের পরিকল্পনা
দিনের শুরু:
আপনার দিন শুরু করতে পারেন ‘রোকিয়া দেল’অরসো’ (ভালুকের পাথর) নামক একটি স্থানে আরোহণ করে। এটি সার্ডিনিয়ার উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এই স্থানটি প্রাচীন নাবিকদের দিক নির্দেশনার জন্য ব্যবহৃত হত।
উপরে উঠে আপনি বোনিফাসিও প্রণালী এবং ম্যাদালেেনা দ্বীপপুঞ্জের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। এরপর, কাছেই অবস্থিত ক্যালা কাপরা-র (Cala Capra) স্বচ্ছ জলে সাঁতার কাটতে পারেন। দুপুরের খাবারের জন্য ইল পাগারো-র (Il Paguro) মত কোনো রেস্তোরাঁ বেছে নিতে পারেন, যেখানে সি-ফুড এবং স্থানীয় নানান পদ পরিবেশন করা হয়।
দিনের দ্বিতীয় ভাগ:
বিকেলে, ১৯ শতকের একটি সামরিক দুর্গ ফোরতেজা দি মন্তে আলতুরা-তে (Fortezza di Monte Altura) যেতে পারেন, যেখান থেকে আপনি কর্সিকা দ্বীপের দৃশ্য দেখতে পারবেন। পালাও (Palau) শহরটিতে সার্ফিং, উইন্ডসার্ফিং-এর মতো বিভিন্ন জলক্রীড়ার সুযোগ রয়েছে।
আপনি ম্যাদালেেনা দ্বীপপুঞ্জে নৌকায় ভ্রমণ করতে পারেন, যেখানে স্বচ্ছ জলে ডলফিন, বারাকুডা, এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী দেখা যায়। শান্ত একটি বিকেলের জন্য, লা লিসিওলা (La Licciola) অথবা স্পিয়াজ্জা ডি তালমোনের মতো সৈকতে যাওয়া যেতে পারে।
সন্ধ্যা:
সূর্যাস্তের সময়, ক্যাপো টেস্তার (Capo Testa) বাতিঘরের দিকে যান, যেখানে অদ্ভুত আকারের গ্রানাইট পাথরের গঠন দেখা যায়। এরপর, সান্টা তেরেসা দি গাল্লুরা (Santa Teresa di Gallura) শহরের রঙিন বাড়ি এবং ক্যাফেগুলোর আশেপাশে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
রাতের খাবারের জন্য, পেমা-র (Pema) মত কোনো রেস্তোরাঁ বেছে নিতে পারেন, যেখানে স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়।
পরের দিনের ভ্রমণ:
গ্যালুরার ঐতিহ্যবাহী দিকটি অনুভব করার জন্য, আপনি অ্যাগগিউস (Aggius) গ্রামের দিকে যেতে পারেন। এখানকার মিউজিয়ামগুলোতে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা যায়।
কাছাকাছি মুন ভ্যালি-তে (Moon Valley) গিয়ে বাতাসের দ্বারা গঠিত পাথরের ভিন্ন রূপ দেখতে পারেন। এসপি47 (SP47) সড়ক পথে ভ্রমণ করার সময় অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করা যেতে পারে। আপনি নুরঘে ইজ্জানা-র (Nuraghe Izzana) মতো ব্রোঞ্জ যুগের ধ্বংসাবশেষও দেখতে পারেন।
দুপুরের খাবারের জন্য, অ্যাগ্রিটুরিসমো সান্তু পেত্রু-তে (Agriturismo Santu Petru) যেতে পারেন, যেখানে স্থানীয় খাবার, যেমন – শুকরের মাংস এবং সেদাস (seadas) পরিবেশন করা হয়। বিকেলে, কোস্টা রোসা-র (Costa Rossa) দিকে যান, যেখানে লা মারিনেড্ডা সৈকতে সূর্যাস্তের দৃশ্য খুবই মনোরম হয়।
দিনের শেষে, কান্টিনা লি ডুনি (Cantina Li Duni) -তে যান, যেখানে স্থানীয় আঙ্গুর থেকে তৈরি ওয়াইন উপভোগ করা যায়। ক্যালাসো বিচ ক্লাব-এ (Calypso Beach Club) ডিজে-র গানের সাথে সূর্যাস্তের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। রাতের খাবারের জন্য, ক্যাসেলসার্দোর (Castelsardo) ঐতিহাসিক অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানো যেতে পারে এবং ল’ইনকান্তু (L’Incantu)-এর মত রেস্তোরাঁয় স্থানীয় স্বাদের খাবার উপভোগ করা যেতে পারে।
আরও কিছু দর্শনীয় স্থান:
টেম্পিও পাউসানিয়া-র (Tempio Pausania) কাছে অবস্থিত নুরঘে মাইয়োরি (Nuraghe Maiori) -তে যাওয়া যেতে পারে, যা সার্ডিনিয়ার সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত নিওলিথিক স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আর্জাকেনা (Arzachena) শহরে গেলে আপনি নুরাঘিক সংস্কৃতি, সমাধিস্থল এবং মেগালিথ দেখতে পারবেন। এখানকার নুরাঘে দি আলবুচ্চিউ (Nuraghe di Albucciu), জায়ান্টস’ টম্ব অফ কডডু ভেッキউ (Giants’ Tomb of Coddu Vecchiu) এবং নুরাঘে লা প্রিসগিওনা (Nuraghe La Prisgiona) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, রোকিয়া দেল’ইলেফান্তে (Roccia dell’Elefante) -এর মতো আকর্ষণীয় স্থানগুলোও আপনার ভ্রমণ তালিকায় যোগ করতে পারেন।
সেরা পাঁচটি সৈকত:
উপসংহার
সার্ডিনিয়া, বিশেষ করে গ্যালুরা অঞ্চল, প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্য, ঐতিহাসিক স্থান, এবং স্থানীয় সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিশ্রণ। এখানকার অভিজ্ঞতা যেকোনো ভ্রমণকারীর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক