পোল নিউম্যান, হলিউডের এক কিংবদন্তি অভিনেতা, শুধু অভিনয় প্রতিভার জন্য নন, বরং মানবতাবাদী কাজের জন্য আজও স্মরণীয়। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে তাঁর জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়, যেখানে তাঁর অবদান বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।
গত ৭ই এপ্রিল ‘এ নাইট অফ সিরিয়াস ফান গালা’ অনুষ্ঠানে টম হ্যাঙ্কস, পল রুড, এবং অ্যাডাম ড্রাইভারের মতো তারকারা প্রয়াত অভিনেতাকে সম্মান জানান। এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল নিউম্যানের অসামান্য মানবিক দিকটি তুলে ধরা, বিশেষ করে শিশুদের জন্য তাঁর উৎসর্গীকৃত কাজগুলো।
অনুষ্ঠানে টম হ্যাঙ্কস নিউম্যানকে ‘মার্কিন কিংবদন্তি’ হিসেবে অভিহিত করে তাঁর অভিনয় জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন। সেই সাথে তিনি নিউম্যানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। হ্যাঙ্কস জানান, ১৯৮৮ সালে নিউম্যান গুরুতর অসুস্থ শিশুদের জন্য একটি বিশেষ ক্যাম্প তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
তাঁর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি একটি আন্দোলনের সূচনা করেন, যা আজও বিশ্বজুড়ে শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। হ্যাঙ্কস আরও বলেন, নিউম্যানের চোখে, শিশুদের সামান্য দুষ্টুমি করা মানেই ছিল তারা এমন কিছু করছে যা আগে তাদের কাছে অসম্ভব ছিল।
পল রুড নিউম্যানকে একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে উল্লেখ করে সিরিয়াসফন চিলড্রেন’স নেটওয়ার্কের প্রতি তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেন। রুড জানান, নিউম্যানের একটি সাধারণ ধারণা ছিল: যদি গুরুতর অসুস্থ শিশুদের জন্য বিনামূল্যে একটি ক্যাম্প তৈরি করা যায়, তবে কেমন হয়? তাঁর সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় এই নেটওয়ার্ক।
বর্তমানে, এই নেটওয়ার্কটি বিশ্বজুড়ে ১০০টিরও বেশি রোগের শিকার শিশুদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে, যা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে থাকে।
অভিনেতা অ্যাডাম ড্রাইভার নিউম্যানের রেসিংয়ের প্রতি আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন এবং এর মাধ্যমে কীভাবে তিনি সমাজসেবামূলক কাজে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন।
পোল নিউম্যান শুধু একজন অভিনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন চলচ্চিত্র পরিচালক এবং রেসিং কার চালকও। ‘দ্য হ just luster’, ‘দ্য স্টিং’, ‘দ্য ভারডিক্ট’, ‘কুল হ্যান্ড লুক’, ‘দ্য কালার অফ মানি’ এবং ‘বুচ ক্যাসিডি অ্যান্ড দ্য সানডেন্স কিড’-এর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় আজও দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে ৮৩ বছর বয়সে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নিউম্যানের জীবনাবসান হয়। তবে তাঁর মানবিক কাজগুলো আজও বেঁচে আছে।
সিরিয়াসফন চিলড্রেন’স নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তিনি শিশুদের জন্য যে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন, তা সত্যিই অনুকরণীয়। এই নেটওয়ার্ক বর্তমানে বিশ্বের ৩০টিরও বেশি ক্যাম্পে গুরুতর অসুস্থ শিশুদের এবং তাদের পরিবারকে বিনামূল্যে সেবা প্রদান করে।
৫০টিরও বেশি দেশের শিশুদের জন্য জীবন পরিবর্তনকারী ২০ লক্ষেরও বেশি অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে এই সংস্থা।
২০২২ সালে নিউম্যানের কন্যা ক্লিয়া নিউম্যান বলেছিলেন, তাঁর বাবা সত্যিই সমাজে পরিবর্তন আনতে এবং শিশুদের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন। সিরিয়াসফন চিলড্রেন’স নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শিশুদের জন্য নিউম্যানের এই উৎসর্গীকৃত মনোভাব আজও বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা যোগায়।
তথ্য সূত্র: পিপল