**ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত, অপরাধ দমনে ড্যানিয়েল নোবোয়ার পরিকল্পনা**
কুইটো, ইকুয়েডর (সংবাদ সংস্থা) – ২০২৩ সালের আকস্মিক নির্বাচনে জয়লাভ করে সাড়া ফেলেছিলেন ড্যানিয়েল নোবোয়া।
স্বল্প সময়ের জন্য আইনপ্রণেতা থাকার পরেই তিনি মাত্র ১৬ মাসের জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
সেই তরুণ রাজনীতিক এবার দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় আসার জন্য জনগণের রায় পেলেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি আবারও সাবেক প্রভাবশালী প্রেসিডেন্টের উত্তরসূরিকে পরাজিত করে চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
এই নতুন মেয়াদে ৩৭ বছর বয়সী নোবোয়া, যিনি একটি কলা ব্যবসার উত্তরাধিকারী, তার বিতর্কিত, তবে কিছু ক্ষেত্রে সফল অপরাধ দমন কৌশলগুলো চালিয়ে যেতে পারবেন।
এই কৌশলগুলোর কারণে একদিকে যেমন তিনি ভোটারদের সমর্থন পেয়েছেন, তেমনই আবার আইনের সীমা অতিক্রম করার অভিযোগও উঠেছে।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে নোবোয়া বলেন, “যারা সবসময় এই তরুণ প্রেসিডেন্টের উপর আস্থা রেখেছেন, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।
ইকুয়েডর পরিবর্তন চায়, এটি এগিয়ে যেতে চায়।”
রাজনৈতিক জীবনে আসার আগে নোবোয়া ১৮ বছর বয়সে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি খোলেন।
এরপর তিনি তার বাবার ‘নোবোয়া কর্পোরেশন’-এ যোগ দেন, যেখানে শিপিং, লজিস্টিকস এবং বাণিজ্যিক বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
২০২১ সালে তিনি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন এবং এর অর্থনৈতিক উন্নয়ন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে, নোবোয়া বামপন্থী আইনজীবী লুইসা গঞ্জালেজকে পরাজিত করেন।
মূলত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গুইলারমো লাসোর জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়া এবং নিজের মেয়াদ সংক্ষিপ্ত করার সিদ্ধান্তের কারণে এই নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও গঞ্জালেজকে হারিয়েছেন নোবোয়া।
ইকুয়েডরের জাতীয় নির্বাচন পরিষদের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ৯২ শতাংশ ভোট গণনার পর নোবোয়া ৫৫.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, যেখানে গঞ্জালেজ পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট।
তবে গঞ্জালেজ, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার অনুসারী, নির্বাচনের ফলাফলে ‘ভোট কারচুপির’ অভিযোগ তুলে পুনর্গণনার দাবি জানিয়েছেন।
নোবোয়ার শাসনামলে, ইকুয়েডরে হত্যার হার কিছুটা কমেছে।
২০২৩ সালে যেখানে প্রতি ১ লাখে ৪৬.১৮ জন খুন হতো, সেখানে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি ১ লাখে ৩৮.৭৬ জনে।
যদিও ২০১৯ সালের তুলনায় (প্রতি ১ লাখে ৬.৮৫ জন) এই হার এখনো অনেক বেশি।
ক্ষমতার প্রথম অল্প সময়ে নোবোয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আন্দিজ অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ গ্রেস জ্যারামিলোর মতে, কিছু ভোটারের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এই বিষয়টির প্রভাব ছিল।
জ্যারামিলো বলেন, “অধিকাংশ ইকুয়েডরবাসীর অভিবাসী আত্মীয়-স্বজন রয়েছে এবং তারা জানেন যে গঞ্জালেজের মতো বামপন্থীর সরকার হলে তাদের জন্য নির্বাসন প্রক্রিয়া কঠিন হবে।
তাই ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা অনেক পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
তবে নোবোয়ার অপরাধ দমন কৌশল নিয়ে দেশের ভেতরে এবং বাইরে প্রশ্ন উঠেছে।
জানুয়ারী ২০২৪-এ, তিনি দেশে অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাত ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে কিছু এলাকায়, বিশেষ করে যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়, সেখানে সামরিক বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়।
এছাড়া, মেক্সিকোর দূতাবাসে অভিযান চালিয়ে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন নোবোয়া।
জর্জ গ্লাস একজন পলাতক আসামি ছিলেন এবং সেখানে কয়েক মাস ধরে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
এ বছর নির্বাচনের আগে, কুইটোর ইউনিভার্সিটি অফ দ্য আমেরিকাসের অধ্যাপক মারিয়া ক্রিস্টিনা বায়াস বলেন, “নোবোয়া আইন এবং সংবিধানকে নিজের মতো করে ব্যবহার করতে দ্বিধা করেননি এবং পুনরায় নির্বাচিত হলে তিনি সম্ভবত একই কাজ করবেন।”
ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই নোবোয়া এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেরোনিকা আবাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
এই বিরোধের কারণ এখনো অজানা।
তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই নোবোয়া আবাদকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেন, যা কার্যত তাকে তার প্রশাসন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
আবাদ তার এই পদায়নকে ‘জোরপূর্বক নির্বাসন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস