ইয়েমেনে সম্ভাব্য মার্কিন বিমান হামলায় অন্তত ৬ জন নিহত, জানিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত সানার আশেপাশে চালানো এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ২৬ জন।
সোমবার হুতি কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। একইসঙ্গে তারা দাবি করেছে, তারা একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
প্রায় এক মাস আগে, ১৫ই মার্চ থেকে, মধ্যপ্রাচ্যের জলপথে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার ঘটনার জেরে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলা জোরদার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে চালানো এই হামলায় এ পর্যন্ত ১২০ জনের বেশি নিহত হয়েছে বলে হুতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
হুতিদের আল-মাসিরাহ স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, দমকলকর্মীরা একটি কারখানার ধ্বংসস্তূপে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। বিদ্রোহীদের দাবি, সানা প্রদেশের বানি মাতার এলাকার একটি সিরামিক কারখানায় বিমান হামলার কারণেই এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে।
তবে, মার্কিন সামরিক বাহিনী, যা মার্কিন সামরিক অভিযান তদারকি করে, এখন পর্যন্ত এই হামলার কথা স্বীকার করেনি। হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ২০০টির বেশি হামলা চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে, হুতি বিদ্রোহীরা রোববার রাতে ইয়েমেনের হাজ্জাহ প্রদেশে আরেকটি মার্কিন এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে। এই প্রদেশটি লোহিত সাগরের কাছে, যা সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী।
হুতি মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারে এক ভিডিও বার্তায় জানান, গত দুই সপ্তাহে বিদ্রোহীরা চতুর্থবারের মতো ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি আরও জানান, বিদ্রোহীরা স্থানীয়ভাবে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ড্রোনটি ভূপাতিত করেছে। তাদের কাছে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেমন ইরানের তৈরি ৩৫৮ ক্ষেপণাস্ত্র।
যদিও ইরান বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহের কথা অস্বীকার করে, তবে জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তেহরান-নির্মিত অস্ত্রশস্ত্র প্রায়ই যুদ্ধক্ষেত্রে এবং ইয়েমেনে পাঠানো সমুদ্রগামী জাহাজে পাওয়া যায়।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর বহুল ব্যবহৃত জেনারেল অ্যাটমিক্স রিপার ড্রোনগুলির প্রতিটির মূল্য প্রায় ৩ কোটি মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুসারে যা প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার সমান)। এই ড্রোনগুলো ৪০,০০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে এবং ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আকাশে থাকতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্র এবং সিআইএ দীর্ঘদিন ধরে আফগানিস্তান, ইরাক এবং বর্তমানে ইয়েমেনে এই ড্রোন ব্যবহার করে আসছে।
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড ড্রোন ভূপাতিত করার খবর সম্পর্কে অবগত আছে জানালেও বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলের তুলনায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে হুতিদের বিরুদ্ধে নতুন মার্কিন অভিযান আরও ব্যাপক রূপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন শুধু ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলিতে আঘাত হানছে না, বরং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে এবং শহরগুলোতে বোমা ফেলছে।
হুতিরা গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দেওয়ার পরেই এই নতুন বিমান হামলার সূচনা হয়। হুতিরা ‘ইসরায়েলি জাহাজ’-এর একটি অস্পষ্ট সংজ্ঞা দিয়েছে, যার ফলে অনেক বাণিজ্যিক জাহাজ হামলার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত হুতিরা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে ১০০টির বেশি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে দুটি জাহাজ ডুবে গেছে এবং চারজন নাবিক নিহত হয়েছে। তারা মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোকেও লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যদিও সেগুলো সফল হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই বিমান হামলার সঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাও জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস