দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়ুন সুক-ইওল-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে। সোমবার সিউল সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হাজির হয়ে ইয়ুন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। গত বছর জারি করা সামরিক আইনকে তিনি ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে মানতে নারাজ।
ইয়ুন-এর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেছেন, সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল না। বরং, বিরোধী দলের কিছু পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এটি জরুরি ছিল।
যদি ইয়ুনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তবে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দেখিয়েছেন, ইয়ুনের সামরিক আইন জারির কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না। তারা আরও অভিযোগ করেন যে, ইয়ুন সংসদের মতো রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে অচল করে দিতে চেয়েছিলেন।
তবে, ইয়ুন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে প্রায় ৪০ মিনিট বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন সামরিক আইন কোনো অভ্যুত্থান ছিল না।
এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বিরোধী দলের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করা। ইয়ুনের মতে, বিরোধী দল সরকারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছিল, বিশেষ করে যখন তারা ২০ জনের বেশি সরকারি কর্মকর্তাকে অভিশংসন করে।
ইয়ুন একে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও দাবি করেন, এই সামরিক আইন ছিল ‘বার্তা প্রদানের উদ্দেশ্যে’, যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তুলে নেওয়া হতো।
আদালতে শুনানিতে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউন-এর বক্তব্যও রেকর্ড করা হবে। এছাড়া, প্রসিকিউটরদের আনা অভিযোগের ভিত্তিতে দুজন সামরিক কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়া হবে।
তাদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আইনপ্রণেতাদের জাতীয় সংসদ থেকে বের করে আনার নির্দেশ পেয়েছিলেন, যাতে সামরিক আইন কার্যকর করা যায়। ইয়ুন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইয়ুনের বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে। আইনজীবী মিন কিয়ং-সিকের মতে, “আগস্ট মাসের মধ্যে প্রথম রায় আসতে পারে, তবে মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় ৭০ হাজার পৃষ্ঠার নথি এবং অসংখ্য সাক্ষী রয়েছে। তাই আদালতের প্রয়োজন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হতে পারে।”
যদি ইয়ুনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তবে তিনি হবেন দক্ষিণ কোরিয়ার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট, যিনি বিদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। এর আগে ১৯৭৯ সালের অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে দুজন সামরিক নেতার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়েছিল।
যদিও ইয়ুনের মৃত্যুদণ্ডের সম্ভাবনা খুবই কম, কারণ ১৯৯৭ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়ে কার্যত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা