বিশ্বকাপ রাগবি: আয়োজনে অর্থ সংকট, শীর্ষ দেশগুলোর ভবিষ্যৎ কী?
বিশ্বজুড়ে রাগবি বিশ্বকাপের আসরগুলো আয়োজনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে শীর্ষস্থানীয় দলগুলো। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০৩৫ ও ২০৩৯ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনে আগ্রহ দেখালেও, আর্থিক কারণে পিছিয়ে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর ফলে এই খেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
আসলে, রাগবি বিশ্বকাপের আসর বসানো এখন আর আগের মতো সহজ নেই। একদিকে যেমন রয়েছে বিশাল অবকাঠামো তৈরির খরচ, তেমনি টিকিটের দাম থেকে শুরু করে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খাতেও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার রাগবি ফেডারেশনের প্রধান মার্ক আলেকজান্ডারের মতে, একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে এত বড় ইভেন্ট আয়োজন করা তাদের পক্ষে কঠিন। কারণ, এর সঙ্গে অনেক সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত থাকে।
অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের মতো দলও তাদের দুর্বল অবকাঠামোর কারণে ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান। যদিও তারা অতীতে বেশ কয়েকবার সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, তাদের পক্ষে এত বড় টুর্নামেন্টের আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আয়ারল্যান্ডও একবার বিশ্বকাপ আয়োজনের দৌড়ে ছিল, কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এমনকি, তারা প্রতিবেশী স্কটল্যান্ডের সমর্থনও পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আয়োজক স্বত্ব নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারার কারণেই এমনটা হয়েছিল।
বিশ্বকাপ আয়োজনের খরচ দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু সেই তুলনায় দলগুলোর আয় সেভাবে বাড়ছে না। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্স ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন করে প্রায় ১৩ মিলিয়ন ইউরোর মতো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। যদিও টুর্নামেন্টটি বিশ্ব রাগবি ফেডারেশনকে (World Rugby) প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব এনে দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে রাগবি ইউনিয়নগুলোর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, বিশ্বকাপ আয়োজনের ফলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, কারণ তারা টুর্নামেন্ট থেকে সেভাবে লাভবান হতে পারছে না। তারা মনে করে, বিশ্ব রাগবি ফেডারেশন মূলত উদীয়মান দেশগুলোতে খেলাটির প্রসারের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করছে, যা তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে, বিশ্ব রাগবি ফেডারেশন এখন নতুন আয়ের উৎসের দিকে ঝুঁকছে। সম্ভবত ২০২৯ সালের মধ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে খেলাটির জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাইছে। এছাড়া, ২০৩০-এর দশকে জাপানেও বিশ্বকাপ আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারও বিশ্বকাপ আয়োজনের আগ্রহ দেখাচ্ছে। যদিও তাদের জন্য আবহাওয়ার কারণে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করা কঠিন হতে পারে। এছাড়াও, দলগুলোর অংশগ্রহণেও জটিলতা দেখা দিতে পারে।
সব মিলিয়ে, রাগবি বিশ্বকাপের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় দলগুলোর আর্থিক সংকট এবং বিশ্ব রাগবি ফেডারেশনের নীতি, খেলাটির ভবিষ্যৎকে নতুন দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ব রাগবি ফেডারেশন কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এবং খেলাটিকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান