যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে শান্তি ফেরাতে যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। লন্ডনে হওয়া এই সম্মেলনে সুদানের সংকট নিরসনে একটি সম্ভাব্য পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়।
এতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এই সম্মেলনে মূলত সুদানে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং সংঘাত বন্ধের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে সুদানে সেনাবাহিনী এবং আধা-সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছে। এই গৃহযুদ্ধের কারণে ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১ কোটি ৩০ লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
দুর্ভিক্ষের কারণে দেশটির একটি বিরাট অংশ চরম খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছে। সম্মেলনে সুদানের পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সম্মেলনে বক্তারা সুদানের জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সুদানের জন্য অতিরিক্ত ১৪০ মিলিয়ন পাউন্ড মানবিক সহায়তা প্রদান করবে।
জার্মানিও সুদানের জন্য ১২৫ মিলিয়ন ইউরোর বেশি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
তবে সম্মেলনে সুদানের প্রধান পক্ষগুলোকে, যেমন – দেশটির সেনাবাহিনী অথবা আধা-সামরিক বাহিনীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, এর কারণ হলো, এই সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বিশেষ করে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (United Arab Emirates – UAE) এবং মিশরের ভূমিকা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। সম্মেলনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
সম্মেলনে মানবাধিকার সংস্থাগুলো সুদানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তারা যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করার দায়ে অভিযুক্ত দেশগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, সুদানে গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগের কারণ।
সংস্থাগুলো আরও জানায়, মানবিক সহায়তা বিতরণে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। তারা একটি স্বাধীন, বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
সম্মেলনে বক্তারা দারফুরে উদ্বাস্তু শিবিরগুলোর ওপর সম্প্রতি হওয়া হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুদানের এই সংকট একটি জটিল সমস্যা, যা সহজে সমাধান করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং সুদানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা ছাড়া শান্তি ফিরিয়ে আনা কঠিন।
এই সম্মেলনে সুদানের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে, যা দেশটির জনগণের জন্য শান্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian